স্টাফ রিপোর্টার :
জনপ্রিয়তা নিয়ে বাগযুদ্ধে জড়িয়েছেন বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতা। পরস্পরকে গালাগাল করছেন, চড়-থাপ্পড় মারারও হুমকি দিচ্ছেন। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তৃণমূলে, উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে পুরো কুমিল্লায়। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। একটি ভিডিওতে শোনা যায়, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘চার থেকে পাঁচ দিন আগে একজন বেয়াদবের বাচ্চা, কুলাঙ্গারের বাচ্চা বলে, নাঙ্গলকোটে নাকি মোবাশ্বের আলমের কোনো ভোট নেই । আরে বেয়াদব তুই আসছোস কোথায়? তুই নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে গেছত। তুই আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে গিয়ে বিএনপির লোক খুঁজলে কীভাবে পাবিরে বেয়াদব?’
বৃহস্পতিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) জেলার নাঙ্গলকোটে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে হাসানপুর মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ভিডিওতে তাকে আরো বলতে শোনা যায়, ‘নাঙ্গলকোটে আমার চারিত্রিক সার্টিফিকেট যে দেবে তার চরিত্র নিশ্চয়ই আমার থেকে ভালো হতে হবে। আমি রাজনীতিতে মেজর জেনারেল, তুই বেয়াদব রাজনীতিতে শিশু। তুই কীভাবে আমার রাজনীতির প্রত্যয়নপত্র দিস । মনোনয়ন পাব নইলে পাব না। এ ধরনের বেয়াদবির কথা বললে কানে আর গালে ঠাসায় মারব কিন্তু ।’
জানা যায়, মোবাশ্বের কুমিল্লা-১০ আসন (নাঙ্গলকোট ও লালমাই) বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। এর আগেও তিনি কুমিল্লা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছিলেন। মাসখানেকের ব্যবধানে আবারও বেফাঁস কথা বলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন।
স্থানীয় বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছুদিন আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা শাখার আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোবাশ্বেরকে উদ্দেশ করে বলেন, নাঙ্গলকোটে তার তো কোনো লোক নেই। এই মন্তব্য কে কেন্দ্র করেই সুমনকে উদ্দেশ করে এই বিরূপ মন্তব্যগুলো করেছেন মোবাশ্বের।
হয়রানির শিকার হওয়ার ভয়ে নাম প্রকাশ না করে নাঙ্গলকোট বিএনপির এক কর্মী বলেন, জেলা বিএনপির নেতাদের নিয়ে এ ধরনের বিরূপ মন্তব্য স্থানীয় বিএনপি ও নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। তিনি একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য । তার মুখের ভাষা আরো মার্জিত হওয়া উচিত ছিল । সাধারণ ভোটাররা এই বক্তব্যকে দৃষ্টিকটু হিসেবে দেখছে।
কাকে উদ্দেশ করে এমন কথা বলেছেন মোবাশ্বের তা জানতে চাইলে নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজির আহমেদ বলেন, ‘এমন মন্তব্য বিএনপির জন্য কলঙ্কজনক বিষয়। এভাবে কারো রাজনীতিতে বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়। তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সুমন এবং কুমিল্লা-১০ আসনের সাবেক এমপি গফুর ভূঁইয়াকে ইঙ্গিত করে এসব কথা বলেছেন। মানুষ আমাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করছে। একজন এমপি পদপ্রার্থী কীভাবে এত নোংরা ভাষায় কথা বলেন ।’
গালাগালের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোবাশ্বের বলেন, ‘যে আমার রাজনীতিতে ছোট সে যদি আমার এসিআর লিখে তাকে ঠাসায় মারব আমি এখনো বলি। আমাকে নিয়ে একজন ব্যক্তি খারাপ মন্তব্য করেছে । এজন্য আমি তার বিরুদ্ধে এসব কথা বলেছি । আমি রাজনীতিতে মেজর জেনারেল, যে আমাকে নিয়ে কথা বলবে তাকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হতে হবে ।’
এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সুমন বলেন, ‘তিনি যদি এমন মন্তব্য করে থাকেন তাহলে ওয়েল অ্যান্ড গুড । তবে তার বিষয়ে আমি এমন কোনো মন্তব্য করিনি । আর এমন মন্তব্য করেছি তিনি আমাকে প্রমাণ দেখাক । তিনি তো বলেছেন রাজনীতিতে মেজর জেনারেল, অনেক ক্ষমতাবান ।’
মনোনয়ন পাব নাইলে পাব না। এ ধরনের বেয়াদবির কথা বললে কানে আর গালে ঠাসায় মারব কিন্তু। এ ধরনের কথা একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলতে পারেন কি না জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া আমার দেশকে বলেন, শালীনতা বজায় রেখে কথা বলতে হবে । তিনি কাকে উদ্দেশ করে এসব অশালীন বক্তব্য দিয়েছেন তা আমার জানা নেই। এ ধরনের বক্তব্য কাম্য নয় । এ ধরনের বক্তব্যে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।