স্টাফ রিপোর্টার :
বিএনপির ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপি বুধবার(০৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা করেছে। শোভাযাত্রাটি উপজেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে শুরু করে উপজেলা পরিষদ, থানা গেইট এবং পৌর বাজারের বটতলা হয়ে নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এ্যাডভোকেট হামিদুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির প্রভাবশালী সদস্য আলহাজ্¦ আব্দুল গফুর ভূঁইয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আব্দুল গফুর ভূঁইয়া বলেন, ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতীয় আধিপত্যবাদ জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট আমরা একটি পরিবর্তন দেখলাম। শেখ হাসিনা অহংকার এবং দম্ভ করতেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি বহু লোককে গুম, খুন করেছেন। লক্ষ-লক্ষ মানুষকে ঘর-বাড়ি ছাড়া করছেন। তার লেকজন বলতো তারা ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন। কিন্তু সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ। কিন্তু শেখ হাসিনা ও তার দল আল্লাহকে বিশ^াস করতেন না। তারা পুলিশ লীগ, আদালতলীগ করেছে। মানুষের কথা বলার অধিকার ও বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে। শেখ হাসিনা মনে করেছে, আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন। কিন্তু তিনি আজ পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। নাঙ্গলকোট স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন নিয়ে হাইকোর্টে আমরা রায় পেয়েছি। কিন্তু তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদুল হাসান সে রায় বাস্তবায়ন করতে দেয় নাই। আমরা ২০০১ সালের নাঙ্গলকোটের স্বতন্ত্র আসন্ েফিরে আসবো। আমরা লালমাই ও সদরদক্ষিণ চাই না। আমরা নাঙ্গলকোট স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন চাই।
উপজেলা ছাত্রদল সাবেক সভাপতি ছালেহ আহম্মদ ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল যুগ্ম আহবায়ক মফিজুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ ইদ্রিছ, অধ্যাপক মাহবুবুল হক মজুমদার, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গোলাম রসুল চেয়ারম্যান, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি শোয়ায়েব খন্দকার, পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক আনোয়ার হোসেন মুকুল, পৌরসভা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার হোসেন ছোট নয়ন, যুগ্ম আহবায়ক ডাঃ বাহার প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলী আক্কাছ, মিজানুর রহমান, উপজেলা যুবদল নেতা মাজহারুল ইসলাম ছুপু, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য একেএম সায়েম মজুমদার শিপু, উপজেলা ছাত্রদল সাবেক সহ-সভাপতি ও যুবদল নেতা এস এম নাছির উদ্দিন, যুবদল নেতা সেলিম জাহাঙ্গীর মন্টু নাছির উদ্দিন পিন্টু, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল আহবায়ক অধ্যাপক খোরশেদ আলম, সদস্য সচিব আজিম উদ্দিন মাকসুদসহ উপজেলা, পৌরসভা, বিভিন্ন ইউনিয়ন বিএনপির ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দসহ ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবকদল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুল গফুর ভূঁইয়া আরো বলেন, নাঙ্গলকোট উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ১শ ৪৪ টি ওয়ার্ডের বিএনপির নির্বাচিত কমিটির নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতিতে বিএনপির ৪৭ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। নাঙ্গলকোট পৌরসভা ৯টি ওয়ার্ডের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সবভেদাভেদ ভূলে এক ছাতার নিচে এসেছে। তিনি এসময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রশ্ন রেখেন বলেন, নাঙ্গলকোটে বিএনপির কোন গ্রুপি কি আছে ? এসময় নেতাকর্মীরা সমুচ্চরে জবাব দিয়ে বলেন, নাঙ্গলকোট বিএনপিতে কোন গ্রুপিং নেই। ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া নিজ হাতে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। মনোনয়ন নিয়ে আমি এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় আসি। পরে জানতে পারি ষড়যন্ত্র করে এবং প্রায় ৫০লক্ষ টাকার বিনিময়ে আমার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। গত ১৬ বছর আমার কোন পদ-পদবি না থাকলেও নাঙ্গলকোটের মানুষের হৃদয় থেকে আমাকে মুছে ফেলতে পারেনি। যারা কাগুজে কমিটি নিয়ে এসেছে। তারা মানুষের হৃদয়ে পৌঁছাতে পারেনি। গত ৩৫বছর যাবত নাঙ্গলকোটের মানুষের সাথে রাজনীতি করছি। মৃত্যু আগ পর্যন্ত নাঙ্গলকোটের মাটি ও মানুষের সাথে রাজনীতি করবো ইনশাআল্লাহ। আমি সংসদ সদস্য থাকাকালীন মদ, জুয়া ও অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ করেছি। আমি একজন সেবক ছিলাম। কিন্তু শাসক ছিলাম না। উপজেলার সর্বত্র বিদ্যুাতায়ন, রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, খাল খনন, মক্তব, মসজিদ এবং স্কুল কলেজের উন্নয়ন করেছি। আগামীতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে প্রত্যেকটি বাড়ির সাথে সংযোগ সড়ক পাকাকরণ করবো। আগামীতে নির্বাচিত হলে নাঙ্গলকোটে কোন ঘুষ, দূর্ণীতি, দখলবাজি এবং চাঁদাবাজি থাকবে না। তিনি এসময় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যেসব নেতা-কর্মী টাকা উপার্জনের রাজনীতি করবেন। তারা আমার সাথে থাকতে পারবেন না। রাজনীতি হচ্ছে সেবা এবং ত্যাগের জন্য। ভোগের জন্য নয়। বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নাঙ্গলকোট পৌরসভাসহ ১৬টি ইউনিয়নের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ব্যানার, ফেস্টুন, বাদ্যযন্ত্র নিয়ে অংশগ্রহন করেন। এসময় বিএনপির সাথে উপজেলা, পৌর ও বিভিন্ন ইউনিয়ন ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদলসহ অঙ্গ-সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উৎসাহ-উদ্দিপনার মধ্যে দিয়ে আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।