স্টাফ রিপোর্টার:
এনড্রোয়েট মোবাইল যুগে এসে আমাদের ছাপা কাগজে পত্রিকা পড়ার প্রবণতা দিন-দিন সত্যিই হারিয়ে যেতে বসেছে।পত্রিকাগুলোও তাদের এনড্রোয়েট মোবাইল ফোন তথ্য প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে নিজের অস্তিত্বের লড়াইয়ে পত্রিকার অন লাইন ভার্সন দিয়ে রেখেছে। গ্রাহক যে কোন মূহুর্তে মোবাইল ফোনের ডাটা অন করে তার কাঙ্খিত পত্রিকার অন লাইন ভার্সনে দেশ-বিদেশের প্রতিমূহুর্তের খবরের পাশাপাশি অনলাইনে প্রতিদিনের পত্রিকা দেখতে পারছেন।
কিন্তুবয়সে যারা প্রবীণ তাদের এনড্রোয়েট মোবাইল ফোনের ডাটা অন করে পত্রিকার অন লাইন ভার্সনে দেশ-বিদেশের খবরের পাশাপাশি পত্রিকার প্রিন্ট লাইন ভার্সন দেখার সুযোগ হয় না। এছাড়া যারা দীর্ঘদিন থেকে ছাপার অক্ষরে পত্রিকা পড়ে আসছেন তাদের নিকট ছাপা পত্রিকা পড়তেই মজা। এনড্রোয়েট মোবাইল ফোন যুগে এসে গ্রামাঞ্চলেও পত্রিকা পড়ার প্রতি পাঠকদের আগ্রহ ক্রমেই হারিয়ে গেছে। এছাড়া তরুণরা এনড্রোয়েট মোবাইল ফোনে ফেসবুক আসক্তিসহ ইউটিভবে ভিডিওসহ বিভিন্ন কন্টেন্ট দেখায় ব্যাস্ত থাকায় তারাও ছাপার অক্ষরে পত্রিকা এখন আর পড়েন না বললেই চলে। যার ফলে পত্রিকার এজেন্ট মালিকরাও পত্রিকা বিক্রি করে লাভ না হওয়ায় পত্রিকা বিক্রিতে তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এতে করে অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলে পত্রিকা ব্যবসা হারিয়ে যেতে বসেছে। যার ফলে ছাপার অক্ষরে পত্রিকা পড়তে অভ্যস্ত পাঠকদের প্রতিদিনের মতন পত্রিকা পড়তে না পারার মনোকষ্ঠে তাদের চোখে পানি এসে যায়।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের বাঙ্গড্ডা এলাকায় আবুল কাশেম গাফুরী এজেন্সির মাধ্যমে দেশের সব জাতীয় দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত আসতো। প্রিন্ট লাইন ভার্সনে পত্রিকা পড়তে আগ্রহী পাঠকরা তাদের কাঙ্খিত পত্রিকা ক্রয় করে পড়তেন। কিন্তু পত্রিকার পাঠক না বাড়ায় এবং হকার পত্রিকার টাকা নিয়মিত পরিশোধ না করায় বাঙ্গড্ডা এলাকায় একাধিকবার পত্রিকা বন্ধ করে আবার চালু রেখেও শেষ পর্যন্ত পত্রিকা ব্যবসা চালু রাখা সম্ভব হয়নি।
স্বপন দত্ত (৬৭)। নাঙ্গলকোটের বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের বাঙ্গড্ডা বাজারে দত্ত ফার্মেসী নামে একটি ওষুধ ব্যবসা চালান। তার গ্রামের বাড়ি একই ইউনিযনের গান্দাছি গ্রামে। তিনি যখন ৮ম শ্রেণীতে পড়েন। ওই সময় তার বয়স ১৩। ১৩বছর থেকে তিনি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন। তিনি ওষুধ ব্যবসার পাশাপাশি প্রতিদিন পত্রিকা পড়েন। প্রতিদিন সকালে উন্মুখ থাকেন। কখন হকার পত্রিকা নিয়ে আসবেন। হকার নিজের কাঙ্খিত পত্রিকা নিয়ে আসার পর পত্রিকার প্রতিটি পৃষ্ঠার দেশ-বিদেশের খবরের দিকে চোখ বুলান। নিবিষ্ট মনে পত্রিকার খবরগুলো পড়েন। কিন্তু বাঙ্গড্ডা এলাকায় গত এক সপ্তাহ থেকে পত্রিকা বন্ধ থাকায় তার পত্রিকা পড়া হয় না। পত্রিকা না পড়ার মনোবেদনায় তিনি কেঁদে উঠেন।
স্বপন দত্ত জানান, তিনি ১৩বছর বয়স থেকে গত ৫৪ বছর পর্যন্ত জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক পড়ে আসছেন। প্রতিদিন সকাল হলে পত্রিকার জন্য উন্মুখ থাকেন। কখন পত্রিকা আসবে। পত্রিকা আসার পর দেশ-বিদেশের খবরের প্রতি চোখ বুলান। পত্রিকায় দেশ-বিদেশের খবর পড়তে না পারলে তার মন ভালো থাকে না। সারাদিন তার খারাপ লাগে। বাঙ্গড্ডা এলাকায় গত এক সপ্তাহ থেকে পত্রিকা বন্ধ থাকায় তাকে পত্রিকা পড়তে না পারার মনোকষ্ঠে পুড়তে হচ্ছে। তিনি নিরাশ মনে দোকানে বসে থাকেন। পত্রিকা না পড়লে তার সময় কাটে না। পত্রিকা পড়তে না পারার কষ্টে তিনি এ প্রতিবেদকের নিকট কেঁদে ফেলেন। তার আশা আবার পত্রিকা চালু হবে। তিনি নিয়মিত পত্রিকার পাতায় চোখ বুলাবেন। তিনি পত্রিকা চালু করার জন্য পত্রিকা এজেন্ট মালিক আবুল কাশেম গাফুরীর নিকট অনুরোধ জানান। শুধু একজন স্বপন দত্ত না। অনেক পাঠক পত্রিকা বন্ধ থাকায় পত্রিকা পড়তে না পরার কষ্টের কথা এ প্রতিবেদকের নিকট জানান।
পত্রিকার এজেন্ট মালিক আবুল কাশেম গাফুরী বলেন, পত্রিকার গ্রাহক সংখ্যা কমে যাওয়া এবং হকার পত্রিকার টাকা নিয়মিত পরিশোধ না করায় পত্রিকার বিল পরিশোধ করতে গিয়ে আমাকে প্রতিনিয়ত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যার ফলে পত্রিকার ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এখন আপাতত পত্রিকা বন্ধ রয়েছে। তিনি আবার পত্রিকা চালু রাখার আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।