এম.এ মান্নান:
কুমিল্লার লাকসামে সাড়ে চার কোটি টাকার ব্যয়ে রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে দৃষ্টিনন্দন আর্চ সেতু নির্মাণ কাজ প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলছে ধীরগতিতে। পৌরবাসীর বহুল প্রত্যাশিত সেতুটির কাজ মন্থর গতিতে চলায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর অভিযোগ গত সাড়ে চার বছরের সেতুটির ৮০ ভাগ কাজও সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদার। এ সেতুর শতভাগ কাজ কয়বছরে শেষ হবে কে জানে? তাছাড়া সেতুর পশ্চিম অংশে নেই পাকা সড়ক।
প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের সবচেয়ে বড় স্থাপনা লাকসামে নির্মাণাধীন আর্চ সেতু। সেতুটি বৃহত্তর লাকসামে একমাত্র আর্চ সেতু। বিগত আওয়ামী সরকার আমলে সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম লাকসাম পৌর শহরের পশ্চিমগাঁও সামনিরপুল, নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ সংলগ্ন ও উত্তর লাকসামে (পেয়ারাপুর জেলেপাড়া) ডাকাতিয়া নদীর ওপর রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে এই দৃষ্টিনন্দন তিনটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২০২০ সালের এই আর্চ সেতুগুলো প্রায় ১৫ কোটি টাকার ব্যয়ে অনুমোদন হয়। সেতুতে দুপাশে থাকবে ফুটপাত, লাইটিং, মধ্যস্থানে পিলার বিহীন, নৌযান চলাচলের জন্য উম্মুক্ত ফাঁক রেখে দুপাশের দুটি অ্যাবাটমেন্টের মাধ্যমে ইস্পাত দিয়ে সেতুগুলো দৃশ্যমান হবে। তিনটি সেতুর মধ্যে দুইটির সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করেছেন অন্য প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারা। কিন্তু পেয়ারাপুর-জেলেপাড়া এলাকায় সেতুটি এখানে শেষ করতে পারিনি ঠিকাদার। আর্চ সেতুরটি ২০২০ সালের ১৯ আগষ্টে ৪ কোটি ৫০ লাখ ১৩ হাজার ৬৭৪ টাকা ব্যয়ে ডাকাতিয়া নদীর ওপর মধ্যভাগে ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য এই সেতুরটি কার্যাদেশ পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান “মেসার্স বেলাল এন্ড ব্রাদার্স” এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে।কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি যথাসময়ে শুরু করলেও ২০২১ সালে ডিসেম্বরে শেষ করার কথা থাকলেও কাজটি শেষ করতে পারেনি। পরে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ কাজের বাড়তি সময়ের আবেদন করলে তাও দেওয়া হয়েছে দুই বার। এরপর তিন বছর ধরে ঢিলেঢালাভাবে সেতুটির কাজ চলছে। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ অংশের কাজ সম্পন্ন হলেও সেতুর দুপাশের মুখের ও সড়কের কাজ বাকি রয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর মুখে পূর্ব পাশে গার্ড ওয়ালের কাজ করছে দুইজন নারী ও একজন পুরুষ শ্রমিক। তারা বেলাল এন্ড ব্রাদার্স ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক। এসময় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাইড ইন্জিনিয়ার দাঁড়িয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে ব্যস্ত। কথা হয় প্রতিষ্ঠানের সাইড ইন্জিনিয়ার জুবায়েদ খানের সাথে তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমি এ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছি এক বছর হয়েছে। আমার আগে এখানের দায়িত্বে ছিলেন রিয়াদ নামে এক সাইড ইন্জিনিয়ার। শ্রমিক সংকটে কারণে সময় মতো সেতুর কাজ শেষ করতে পারিনি। সেতুর মূল কাজ প্রায় শেষ,এখন সেতুর মুখে অল্প কিছু কাজ বাকি রয়েছে, আমরা চেষ্টা করছি কাজটি তাড়াতাড়ি শেষ করতে। তারপরও এ বিষয়ে নিয়ে আপনি কথা বলতে চাইলে আমাদের প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এদিকে নির্মাণধীন সেতুর পশ্চিমে রয়েছে চাঁদপুর রেলপথ তার ঘেঁষে ভাংগা চুড়া একটি মাটির রাস্তা। সেই রাস্তাটি রাজঘাট-মুদাফরগঞ্জ সড়কের সঙ্গে সংযোগ। রাস্তার উত্তর পাশে রয়েছে পেয়ারাপুর গ্রামসহ কয়েকটি সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেতু পূর্বে অংশে কুমিল্লা-নোয়াখালী মহাসড়কের সাথে সংযোগ সড়ক। সড়কের দক্ষিণ কোল ঘেঁষে রয়েছে জংশন স্টেশনের রেললাইন।সড়কের উত্তর পাশে মন্দির, জেলপাড়া,মুচিপাড়াসহ কলকারখানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সেতুর দুই পাড়ের বাসিন্দারা পায়ে হেটে চলাচল করছে পাশের রেল সেতু অথবা নির্মাণ সেতু দিয়ে। পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আবদুর রশিদ ও পেয়ারাপুর গ্রামের মীর আবু বকর সিদ্দিক,বেলাল রহমান মজুমদার, মাহবুবর রহমান মানিক, সাইদুল হক সাদেক জানান, বহু কাঙ্ক্ষিত পেয়ারাপুর-জেলপাড়া গ্রামে ডাকাতিয়া নদীর ওপর দিয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়াতে আমরা বেশ খুশি হয়েছিলাম।
২ বছরের সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু প্রায় পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। যেভাবে কাজ চলছে তাতে কত দিনে শেষ হবে তা তারাই ভালো জানে। আমাদের তো মনে হয় না যে ৬ বছরে এই সেতুর কাজ শেষ হবে। এ বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সোহেল রানা যুগান্তর প্রতিনিধিকে জানান, সেতুর কাজ বন্ধ থাকার পর আমি ওই প্রতিষ্ঠান থেকে এক বছর পূর্বে চাকরি চেড়ে দিয়েছি। লাকসাম পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জাকের হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, সেতুটির কাজ বর্ষা মৌসুমের জন্য বন্ধ ছিল। বর্তমানে কাজ সচল রয়েছে। যদিও যথাসময়ে সেতুটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নানা জটিলতার কারণে তা সম্ভব না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময় বাড়তি চেয়ে আবেদন করেছিল। তাকে তা দেওয়া হয়েছে সে সময়ের মধ্যে যদি তিনি সেতুর কাজ শেষ না করতে পারে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।