লাকসাম প্রতিনিধি :
কুমিল্লার লাকসামে ইক্বরা মহিলা মাদ্রাসার ছাত্রী সামিয়া চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় পুলিশের গা ছাড়া ভাব, কোন আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশ সামিয়ার পরিবার, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
গত ২৭ এপ্রিল সামিয়াকে হত্যার অভিযোগে সামিয়ার মা শারমিন বেগম লাকসাম থানায় একটি এজাহার দিয়েছেন। তিনি সন্দেহভাজন মাদ্রাসা সুপার জামাল উদ্দিন, শিক্ষক শারমিন ও দারোয়ান খলিলকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলে ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন হবে বলে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন।
১৭ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) গভীর রাতে ইক্বরা মাদ্রাসায় আহত শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার (১৩) কে ঢাকায় নেয়া হলে চিকিৎসাধিন অবস্থায় পরেদিন শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে সামিয়া ঢাকার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। সামিয়ার মৃত্যু নিয়ে মাদ্রাসা সুপার দাবি করে সামিয়া পড়তে চায়না বলে ৫ তলার জানালার গ্রীলের ফাঁক দিয়ে ঝাপ দেয়! সামিয়ার পরিবার এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড দাবি করে বলে, ৫ তলা থেকে পড়লে তার চামড়া থেঁতলে হাড় ভেঙে রক্তপাত হবার কথা, যার কোন লক্ষ্মণ পরিলক্ষিত না হওয়ার কারণে তারা থানায় মামলা করতে গেলে মৃত্যু সংবাদ গ্রহণ করা হয়।
এরপর এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে পরিবার ও সাধারণ মানুষ। নানামুখী চাপে ১০ দিন পর হত্যা মামলা গ্রহণ করতে বাধ্য হয় লাকসাম থানা। কিন্তু মামলা গ্রহণ করার পর আরও ১০দিন পার করেও মামলার কোন অগ্রগতি করতে পারিনি বলে হতাশ সামিয়ার মা। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, তবে কি আমার মেয়ে হত্যার বিচার পাবো না? প্রভাবশালীর দাপটের কাছে আমরা হেরে যাবো? এজাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা। তিনি বলেন, আমরা তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, ময়নাতদন্তের পর পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সামিয়ার মা শারমিন বেগম অভিযোগ করে বলেন, সামিয়া ৫ম তলা থেকে ঝাপ দিয়ে নিচে পড়ে মারা গেছে বলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অপপ্রচার চালালেও তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সামিয়ার মৃত্যুর সংবাদ শুনে বাবা প্রবাসী নিজাম উদ্দিন শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। তিনি সামিয়াকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি জানিয়ে দ্রুত হত্যাকান্ডে বিচার চেয়েছেন।
সামিয়ার মা শারমিন বেগম আরও বলেন, আমার মেয়েকে গত ১০ মার্চ লাকসাম ইক্বরা মহিলা মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়। ভর্তির একমাস পর আমার বড় বোন গত ১৩ এপ্রিল সামিয়াকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে ফেরত নিতে গেলে মাদ্রাসা সুপার জামাল উদ্দিন আমার বোন ও সামিয়াকে ধমক দেয়। এসময় দারোয়ান ধাক্কা দিয়ে আমার বোনকে বের করে দেয় এবং শিক্ষক শারমিন আমার মেয়ে সামিয়াকে টেনে-হিছড়ে মাদ্রাসার উপরে নিয়ে যায়। এসময় দুর থেকে সামিয়ার আর্তচিৎকার শুনতে পায় আমার বোন।
তিনি বলেন, এ ঘটনার তিন দিন পর বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) গভীর রাতে মাদ্রাসা থেকে ফোন করে আমাদেরকে লাকসাম আসতে বলে। লাকসাম আসলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানান, সামিয়া মাদ্রাসার পাঁচ তলা ভবনের জানালার ফাঁক দিয়ে ঝাপ দিয়ে নিচে পড়েছে। পরেদিন শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে সামিয়া ঢাকার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
তিনি জানান, সামিয়া মারা যাওয়ার পূর্বে কালো বোরকা পরিহিত কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে বলে আমাদেরকে বলে গেছে। তাই এটি নিশ্চিত একটি হত্যাকান্ড। এই বিষয়ে মামলা করতে গেলে লাকসাম থানা পুলিশ অপমৃত্যু মামলা নেয়। সর্বশেষ বিভিন্ন নাটকীয়তার পর গতকাল রাতে (২৭ এপ্রিল) পুলিশ মামলা নিয়েছেন। এরপর থেকে আমরা কোন অগ্রগতি দেখতে পাইনি বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।