জাফর আহমেদ :
লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস পিয়ন (দপ্তরি) নিয়োগে জালিয়াতির খবর পাওয়া গিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে উক্ত স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা বেগম সাজেদা সাত্তারের নিয়োগ পত্রের সুবাদে অফিস পিয়ন (দপ্তরি) পদে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ ইংরেজি তারিখে মোঃ আবুল কালাম প্রথম যোগদান করেন। নিয়োগ ও যোগদান সংক্রান্ত সকল কাগজপত্রে তখন আবুল কালামের জন্ম তারিখ ছিলো ১ জানুয়ারি ১৯৮১ ইংরেজি। সাবেক প্রধান শিক্ষিকা সুরাইয়া বেগমের নিয়োগ পত্রের সুবাদে লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে উক্ত অফিস পিয়ন (দপ্তরি) ১ জুন ২০১৫ ইংরেজি তারিখে দ্বিতীয়বার যোগদান করেন। তখন তার জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ১ জানুয়ারি ১৯৮৬ ইংরেজি। উক্ত অফিস পিয়নের দুইটা নিয়োগ পত্র এবং দুইটা যোগদান পত্র এই প্রতিবেদকের হাতে সংরক্ষিত আছে। সূত্র জানিয়েছে আবুল কালামের প্রথম নিয়োগের পরে এমপিওভুক্ত করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ বারবার চেষ্টা করলেও একই পদে একাধিক লোক থাকার কারণে আবুল কালামকে এমপিও ভুক্ত করতে পারেনি।
এমপি ভুক্ত না হওয়ার ফাঁকে আবুল কালামের চাকুরীতে যোগদানের বয়সসীমা পার হয়ে গিয়েছে। এ কারণে আবুল কালামের বয়স বাড়িয়ে ২০১৫ সালে তাকে দ্বিতীয়বার নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই নিয়োগের ফলে ২০২০ সালে আবুল কালামকে উক্ত স্কুলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রসরাজ দাস এমপিওভুক্ত করে দেন। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১২ আগস্ট ২০০২ ইংরেজি তারিখে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তির আলোকে তিনজন অফিস পিয়ন (দপ্তরি) পদে আবেদন করেন। ৩০ আগষ্ট ২০০২ ইং তারিখে কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ের ৩ নং আলোচ্য সূচি ছিল, একজন অফিস পিয়ন (দপ্তরি) নিয়োগ কল্পে সাক্ষাৎকার গ্রহণ।
ওই সাক্ষাৎকার বোর্ড মোঃ আবুল কালামকে অফিস পিয়ন (দপ্তরি) পদে নিয়োগ পত্র প্রদানের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করেন। ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ ইং তারিখে ১১০৮/২০০৩ নং স্মারকে অফিস পিয়ন (দপ্তরি) পদে মোঃ আবুল কালামকে নিয়োগপত্র প্রদান করেন প্রধান শিক্ষিকা বেগম সাজেদা সাত্তার। ওই নিয়োগ পত্রের আলোকে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ ইংরেজি তারিখে মোঃ আবুল কালাম অফিস পিয়ন (দপ্তরি) পদে যোগদান করেন। ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ইংরেজি তারিখে ১৮ নং অধিবেশনের দ্বিতীয় সূচির আলোচনায় একজন শিক্ষক ও একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী (পিয়ন) নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে ১মে ২০১৫ তারিখে দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ ও আমাদের কুমিল্লায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১৬ মে ২০১৫ তারিখে ২০ নং অধিবেশনে শিক্ষক ও পিয়ন নিয়োগ বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ইংরেজি শিক্ষক পদে পাঁচটি এবং পিয়ন পদে তিনটি আবেদন জমা পড়ে। ২২ মে ২০১৫ ইং শুক্রবার সকাল ১০টায় চাকরিপ্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
২২ মে ২০১৫ তারিখে ২১ নং অধিবেশনে মোহসিন উদ্দিন খানকে ইংরেজি শিক্ষক ও মোঃ আবুল কালামকে পিয়ন পদে নির্বাচিত করে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ম্যানেজিং কমিটির নিকট সুপারিশ করা হয়। ২৪ মে ২০১৫ ইংরেজি তারিখে ২২ নং অধিবেশনে ইংরেজি শিক্ষক মহাসিন উদ্দিন খান এবং পিয়ন পদে আবুল কালাম নিয়োগ দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। ৪ জুন ২০১৫ তারিখের ২৩ নং অধিবেশনের দ্বিতীয় সূচির আলোচনায় প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া বেগম বলেন, গত ২৪-৫-২০১৫ ইং তারিখের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পিয়ন পদে আবুল কালামকে নিয়োগ প্রদান করা হয় বা নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। তিনি ১/৬/১৫ ইং তারিখে যোগদান করেন। তাহার যোগদান পত্রটি প্রধান শিক্ষিকা গ্রহণ করেন। তা অনুমোদনের জন্য সভায় উপস্থাপন করা হয়। তাহার যোগদান পত্রটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ও অনুমোদিত হয়। একই ব্যক্তি একই প্রতিষ্ঠানে বয়স জালিয়াতি করে দুইবার নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে মোঃ আবুল কালাম বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাকে দুইবার নিয়োগ পত্র প্রদান করেছে আমিও দুইবার যোগদান করেছি। এ ব্যাপারে লাকসাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, বয়স জালিয়াতি করে একাধিকবার নিয়োগ নেওয়ার ও দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারো বিরুদ্ধে এধরনের অভিযোগ আসলে তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।