সবুজ পত্র অনলাইন ডেক্স :
মহিয়সী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণে অনন্য অবদান রেখে গেছেন। তার নির্মিত স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত নবাব বাড়িসংলগ্ন ১০ গম্বুজবিশিষ্ট অনিন্দ্য স্থাপত্যশৈলীর মসজিদটি। যা ‘নবাব বাড়ি মসজিদ’ হিসাবে পরিচিত।
কুমিল্লার লাকসামে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে দৃষ্টিননন্দন মসজিদটি ২০০ বছর আগে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী নির্মাণ করেন। এই মসজিদের পাশে তিনি গড়ে তুলেছেন নবাব ফয়জুন্নেছা কলেজ। যা বর্তমানে নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ নামে পরিচিত। এ কলেজে কয়েকটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু থাকায় লাকসাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকার শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছেন। নবাব ফয়জুন্নেছা অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন।
তিনি তার নির্মিত নবাব বাড়িতে বসে পর্দার আড়ালে থেকে সব বিচার কার্য সম্পাদন, রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ, স্কুল-মাদ্রাসা নির্মাণসহ সব জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। তিনি মসজিদটিতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রাখেন।
মসজিদের ভেতরের দেওয়াল, মিম্বর আর মুয়াজ্জিনের আজান দেওয়ার জায়গায় আছে দুই ধরনের টাইলসের কারুকাজ। সে সময়ের টাইলসগুলো ছিল খুবই দৃষ্টিনন্দন। দেওয়ালের উপরের অংশের টাইলসগুলোতে রয়েছে গোলাপি, সাদা আর নীল রংয়ের কারুকাজ। আর নিচের দিকের টাইলসে হালকা শ্যাওলা সবুজ রংয়ের নকশা।
মসজিদের ছাদে রয়েছে ১০টি গম্বুজ। মাঝখান বরাবর রয়েছে বড় একটি গম্বুজ। এই গম্বুজের চার ধারে মাইকগুলো লাগানো। বড় গম্বুজের চারপাশে আছে মোট ৯টি গম্বুজ। মুসল্লিদের অজু করার সুবিধার্থে একটি পুকুর খনন করা হয়।
মসজিদের দক্ষিণ পাশে শায়িত আছেন নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী। উত্তর ও পূর্ব পাশে তার পরিবারের উত্তরসূরিরা শায়িত আছেন। লাকসাম নবাব বাড়ি পরিদর্শনে আসা ভ্রমণপিপাসুদের অনেকে অনিন্দ্য সুন্দর এ মসজিদে নামাজ আদায় করেন।
নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর পিতার বংশধর ফজলে রহমান চৌধুরী আয়াজ বলেন, নবাব ফয়জুন্নেছা লাকসামের অহংকার। তার নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনার মধ্যে লাকসাম নবাব বাড়ি মসজিদটি অন্যতম।
নবাব ফয়জুন্নেছা জাদুঘরের সমন্বয়ক বিশিষ্ট সাংবাদিক এমএস দোহা বলেন, প্রত্নতত্ত্বের গেজেট অনুসারে মসজিদটি এখন জাদুঘরের আওতাধীন। ওয়াকফ ও জাদুঘরের সমঝোতা স্মারকে তাই উল্লেখ আছে। ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন ও মসজিদের উন্নয়ন তদারকির ব্যয় পর্যায়ক্রমে জাদুঘর বহন করবে।
নবাব ফয়জুন্নেছা মসজিদের ইমাম মাওলানা শহিদুল হক বলেন, মসজিদটি ইতিহাসের সাক্ষী। এটি দীর্ঘদিন ধরে মোতয়াল্লির তত্ত্বাবধানে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়ে আসছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শামসুজ্জামান ভূঁইয়া মুরাদ বলেন, ছোট বেলা থেকে এ মসজিদে নামাজ পড়ে আসছি। চুন-সুরকিতে নির্মিত মসজিদটির পরিবেশ নামাজ আদায়ের জন্য খুব মনোরম ও আরামদায়ক।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা আবদুল মতিন বলেন, সরকারি প্রয়োজনীয় তদারকি না থাকায় মসজিদটি উন্নয়নের ছোঁয়া বঞ্চিত। দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা লাকসাম নবাব বাড়ির পাশাপাশি মসজিদটিও দেখতে আসেন। যা পর্যটনেরই অংশ।
নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়ি জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পরামর্শক্রমে তার বাড়িকে ইতোমধ্যে জাতীয় জাদুঘরের ৯ম শাখা হিসাবে রূপান্তর করে কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। ২০ টাকা দর্শনার্থী ফির বিনিময়ে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জাদুঘর উন্মুক্ত থাকে। ভবিষ্যতে বাড়িটির পাশাপাশি মসজিদটিকে আরও দৃষ্টিনন্দিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন।