জামাল উদ্দিন স্বপন :
কুমিল্লার লাকসামে নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়ি জাদুঘরের তিনটি গ্যালারি ও অতিথিশালা ‘সামনী’ উদ্বোধন করা হয়েছে।১৮এপ্রিল ২০২৫ লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার হামিদের সভাপতিত্বে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন,বাংলাদেশ জাদুঘরের সচির সাদেকুর রহমান, সংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো সাইফুল ইসলাম।এসময়ে অন্যান্নদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোতাওয়াল্লী সৈয়দ মাসুদুল হক, সৈয়দ কামরুল হক, দৈনিক নুতন সময় পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক ও জাদুঘরের সমন্বয়কারী এম এস দোহা , নৌপরিবহন মন্রনালয়ের কর্মকর্তা মুরাদ ভুই্য়া,জাতীয় জাদুঘরের কীপার মনিরুল হক, কীপার আমান উল্লাহ নুরী, লাকসাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবদুল কুদ্দুস, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান দুলাল,সিনিয়র সাংবাদিক মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক আবদুর রহিম,সাপ্তাহিক সবুজপত্র সম্পাদক জামাল উদ্দীন, দুরবিন নিউজ সম্পাদক রিয়াদ ভুইয়া, আহসান উল্লাহ,শাহ নুরুল আলম, হামিদুল ইসলাম,আজিম,বিএনপি নেতা মিজানুর রহাম সেলিম, সোহেল,লাকসাম নবাববাড়ি জাদুঘর ইনচার্জ মো আনোয়ার হোসেন ও সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের ব্যাক্তি বর্গ। উদ্বোধনকৃত নতুন ৩টি গ্যালারীতে নবাব ফয়জুন্নেছার স্মৃতিবিজড়িত ১২৫টি নতুন নিদর্শন স্হান পায়। অতিথিশালা ‘সমন’ উম্মুক্ত করা হয় করা হয়। যাতে নবাব পরিবারের সদস্যরা বিনা ফিতে ৩দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবেন। পর্যটকদের জন্য সরকারি ফি পরিশোধ সাপেক্ষে অবস্থানের সুবিধা রাখা হবে। সেই সাথে শীঘ্রই নবাব ফয়জুন্নেছা হাউজের দ্বিতীয় তালায় গ্যালারী সংযুক্ত করার পদক্ষেপে বিষয়টি জানানো হয়।
উল্লেখ্য, নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁয়ে জন্ম গ্রহন করেন।
উত্তরাধিকার সূত্রে পিতার জমিদারি তিনি লাভ করেন। তিনি প্রজাহিতৈষী জমিদার। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি কুমিল্লা উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করেন। শিক্ষা বিস্তারে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে তিনি তার ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মরণোত্ত্ব ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন। লাকসামের পশ্চিমগায়েঁ নবাব ফয়জুন্নেছার স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী বিগত ১২৯৮ বঙ্গাব্দ ৩০জ্যৈষ্ঠ তারিখে ওয়াকফ দলিলে জমিদার বাড়িটি ওয়াকফ লিল্লাহ করেন। উক্ত ওয়াকফ এস্টেটটি বিগত ১১.১২.১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে তারিখে পাবলিক/ লিল্লাহ সম্পদ হিসেবে ই.সি.নং ৫৪৮ নথিতে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের তালিকাভুক্ত একটি ওয়াকফ এস্টেট।
ওয়াকফ দলিলে মোট জমির পরিমাণ ২১ ৬২৫.২৮ একর। তারমধ্যে ২১৩২৭.৯১ একর প্রজাবিলি সম্পদ।খাস ও নিজ দখলীয় ওয়াকফ সম্পদের পরিমাণ ২৯৭.৩৭ একর। আরএস খতিয়ানে এই জায়গার সঠিক পরমান জানা জায়নি। বিএস খতিয়ানে জায়গার পরিমান কমে প্রায় ১০একরে দাঁড়িয়েছে।
মুলত বিভিন্ন কারনে হারাতে বসেছিলো পশ্চিমগাও নবাব বাড়ির স্হাবর অস্হাবর সম্পদ। বাড়ির দরজা জানালা উধাও।
বাধ্য হয়ে সরকার ২০১৭ সালে গেজেটের মাধ্যমে নবাব ফয়জুন্নেছা বাড়ির ৪.৫৫ একর জায়গা প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে। দীর্ঘদিন বিভিন্ন জটিলতার কারনে সংস্কার, অযত্ন ও অবহেলার কারনে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে নওয়াব ফয়জুন্নেসার স্মৃতিবিজড়িত পশ্চিমগাঁয়ের বাড়িটি। বেদখল হয়ে গেছে ওয়াকফ এস্টেটের অনেক জায়গা। লুটপাট হয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ও মুল্যবান নিদর্শন। ধীরে বাড়ির ইট বালু খুলে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিলো।
ত্যকালীন সাংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে.এম.খালিদ গত ২জুন ২০২৩ নবাব ফয়জুন্নেছার বাড়ী পরির্দশন করেন এবং যাদুঘর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ২৮আগস্ট ২০২৩ তারিখ সাংস্কৃতি মন্ত্রনালয় জাদুঘরের শাখা চালুর সিদ্ধান্তের সুবাধে ২০.৯.২০২৩ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাথে জাতীয় জাদুঘরে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
গত ৬নভেম্বর ২০২৩ আনুষ্ঠানিক নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরীর বাড়িতে জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনকৃত ৩টি গ্যালারীতে ৭৪টি নিদর্শন ২০টাকা দর্শনার্থী ফির বিনিময়ে প্রদর্শিত হয়ে আসছে।
ত্যকালীন স্হানীয় সরকার মন্ত্রী, সাংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের সচিব ও ওয়াকফ প্রশাসক সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সর্বশেষ গত ২৭মে ২০২৪ তারিখে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরীর স্মৃতি বিজড়িত বাড়িতে জাদুঘর পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসন ও জাতীয় জাদুঘরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। যাতে ওয়াকফ প্রশাসনের ক্ষমতা অটুট রেখে জাদুঘর পরিচালনা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। শর্ত থাকে, জাদুঘরে দর্শনার্থী ফির ৫% প্রদান এবং ওয়াকফ এস্টেটের বার্ষিক চাঁদা পরিশোধ জাতীয় জাদুঘর করবে। মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জেমের বেতন ভাতা জাতীয় জাদুঘর দিবে।