নাঙ্গলকোট প্রতিনিধি :
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির নবগঠিত আহবায়ক কমিটি নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা বয়ে যাচ্ছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে রাজনীতির সাথে সম্পর্ক নেই এমন লোকদের কমিটিতে যুক্ত করা ব্যক্তি কারা। এছাড়া প্রবীণ নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে জুনিয়রদের নিয়ে উপজেলা বিএনপি আহবায়ক কমিটি গঠিত হওয়ায় দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে অনেক নেতা-কর্মী আশঙ্কা প্রকাশ করেন। অনেক নেতাকর্মী এ কমিটি গঠনে জেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিবের দিকে আঙ্গুল তুলছেন। তারা এক্ষেত্রে কমিটি বাণিজ্যে বিপুল অঙ্কের টাকা লেনদেনের বিষয়টিকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। অপরিপক্ক কমিটি গঠন ও কমিটি বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপির নিকট দাবী করেন ত্যাগি ও বঞ্চিত নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, গত ৬ এপ্রিল রাতে জেলা বিএনপির আহবায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন ও সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম ভিপি উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেন। এরপর থেকে শুরু হয় এনিয়ে নানা আলোচান-সমালোচনা। প্রবীণ, ত্যাগী ও মাঠকর্মীদের বাদ দিয়ে কীভাবে এমন একটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আরো নানা ধরনের বাক্য নিয়ে ফেসবুক ভাইরাল হয়। যেন ফেসবুক প্রবেশ করলে নেটিজেনরা এ কমিটির বিরুদ্ধে মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
জানা যায়, উপজেলার ত্যাগী ও প্রবীণ বিএনপি নেতা মিয়া মোহাম্মদ ইদ্রিছ, মফিজুর রহমান ডিলার, শহীদুল্লাহ কাশেম, মাস্টার সায়েদুল হক, রফিকুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির দুলাল, ডাঃ শাহজাহান, মোশারফ হোসেন মশু, এছহাক মিয়া, আবুল কালাম আজাদ, মাঈন উদ্দিন, হানিফ রানাদের মতন বিএনপি নেতারা কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন। বিগত দিনে নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা ও ঢাকায় বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে তারা নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া তাদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন মামলার আসামী হয়ে আদালতের বারান্দায় নিয়মিত হাজিরা দিয়েছেন। তারা পদ বঞ্চিত হয়ে দলের নীতি নির্ধারকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিএনপি নেতা মাঈন উদ্দিন কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ওয়ালে লিখেন, নব-নির্বাচিত নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে বাঙ্গড্ডা ইউনিয়ন বিএনপির কোন সদস্যকে রাখা হয় নাই। আমরা বৈষম্যের শিকার। ২৬ বছর রাজনীতি করি। বহু মামলার আসামী হয়েছি। অনেক ত্যাগ শিকার করেছি। আর আহবায়ক কমিটিতে অনেক লোক আছে। একদিনও বিএনপির জন্য আন্দোলন সংগ্রামে ছিল না। বিএনপির নীতি নির্ধারকদের কাছে প্রশ্ন রাখলাম কি কি বিবেচনা নিয়ে এ কমিটি দিলেন ?
নেতাকর্মীদের দাবী কমিটিতি যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে মিজানুর রহমান খোকনকে। অথচ তাকে দৌলখাঁড় ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যরা চিনেন না। তিনি ৫ আগষ্টের পর আবির্ভাব হয়ে কোন নেতার আশীর্বাদপুষ্টে যুগ্ম আহবায়ক হয়েছেন। অধ্যাপক মোশারফ হোসেন তিনি যুবদলের কর্মী ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী বিএনপির সদস্য হওয়ার কথা রয়েছে। তিনিও বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হয়েছেন। জাহাঙ্গীর আলম গত ৮ বছর পুর্বে বিএনপি ছাড়েন। ৫ আগস্টেও পর বিএনপির আহবায়ক নজির আহম্মদকে সালাম করে তিনি যুগ্ম আহবায়কের মত পদ পান। আরিফুল ইসলাম নোমান গত সাড়ে ১৫বছর ধরে আওয়ামীলীগের সাথে আঁতাত করে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিকতা রক্ষা করেন। তার এধরণের কয়েকটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। তিনিও উপজেলার বিএনপির যুগ্ম আহবায়কের পদ বাগিয়ে নেন। ইলিয়াছ মজুমদার তিনি অধিকাংশ সময় চট্রগ্রামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সময় ব্যয় করেন। তাকে গত সাড়ে ১৫ বছরের আন্দোলন সংগ্রামে কেউ দেখেনি। তিনিও যুগ্ম আহবায়ক হয়েছেন। মোঃ শাহআলম চট্টগ্রামে থাকেন তিনিও যুগ্ম আহবায়ক হয়েছেন। যুগ্ম আহবায়ক শহীদুল্লাহ ভূঁইয়াও কোন আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন বলে অনেক নেতাকর্মী জানান। এছাড়া পুর্তুগাল প্রবাসী মামুন হাজারীও বিএনপির সদস্য হয়েছেন। ত্যাগি, বিভিন্ন মামলার আসামী ও প্রবীণ নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠিত হওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
তারা বলেন, দলের দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে টাকার বিনিময়ে মৌসুমী নেতাদের পদ দেওয়া হয়েছে। অনেকে উপজেলা বিএনপির এধরণের কমিটির জন্য কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম ভিপিকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, ওয়াসিম মোটা অঙ্কের টাকা ও স্বর্নের বিনিময়ে এই কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। এজন্য তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবী করছি।
এবিষয়ে বিএনপির সাবেক কমিটির যুগ্ম আহাবয়ক মিজানুর রহমান বলেন, আমরা বিগতদিনে বহু আন্দোলন সংগ্রামে ছিলাম। কখনও পিছু হটিনি। বিএনপি করার কারণে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি । আর এখন জেলার নেতারা মাঠে-ঘাটে নেই। এমনকি বিএনপির সাথে জড়িত ছিলো না তাদেরকেও পদ দিয়েছে। তিনি অবিলম্বে এ কমিটি সংস্কারের দাবী করেন।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াশিমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।