বিশেষ প্রতিনিধি:
কুমিল্লার প্রধান নদী গোমতীর দু’পাড়ের মানুষের যেন কোনভাবেই স্বস্থি মিলছে না। বর্ষায় নদী ভাঙ্গনের আতঙ্কে যেমন রাত জেগে বাঁধ পাহারা ,আবার শুস্ক মৌসুমে মাটি খেকোদের এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা,ডাম্পট্রাক,ট্রাক্টরে মাটি পরিবহনের শব্দ,বায়ু দুষণ,ফসলী জমি নষ্টসহ নানা বিরম্ভনা । আর সেই মাটিবাহী গাড়ি সড়ক,মহাসড়ক দাপিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে আসা-যাওয়া করলেও প্রশাসন বা থানা-পুলিশের নজরে আসছে না কিছুতেই। আর এভাবেই নদী তীরের মানুষদের একদিকে প্রকৃতি,অন্য দিকে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্ভোগ কিছুতেই যেন পথ ছাড়ছে না। এমুহুর্তে কুমিল্লা আদর্শ সদরের কমপক্ষে ৮/১০ টি পয়েন্ট থেকে সন্ধ্যার পর ভোর রাত পর্যন্ত মাটি কাটা চলছে।
কুমিল্লার প্রধান নদী গোমতী প্রতিবেশী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুমুর নামক পাহাড়ি এলাকা থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লার কটকবাজার সীমান্ত দিয়ে এদেশে প্রবেশ করে। এরপর আদর্শ সদর,বুড়িচং, ব্রাহ্মনপাড়া,দেবীদ্বার,মুরাদনগর,তিতাস হয়ে দাউদকান্দিও সাপটায় রেমঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। নদীর দু’পাড়ে রয়েছে বিস্তির্ণ চর। প্রতিবছর উজান থেকে আসা পানিতে বিপুল পরিমান পলি বহন করে নদীর দু’তীরের চরের মাটিকে উর্বর করে। আর সেই উর্বর মাটিতে কৃষক বছরজুড়ে নানা প্রকাশের ফসল উৎপন্ন করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চরের উর্বও মাটির প্রতি এক শ্রেনীর মাটিখেকোদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ায় নদী তীরের মানুষের স্বস্তি, আনন্দ, জীবনে বেঁেচ থাকার সব স্বপ্ন লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। শুস্ক মৌসুমে মাটি কাটা সিন্ডিকেটের লোকের এস্কেভেটর দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য কওে রাত-দিন মাটি কেটে একদিকে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ,অন্যদিকে ফসলী জমি নষ্ট করছে। ফলে বর্ষায় নদীতীরের মানুষ বাঁধভাঙ্গার ঝুঁকি এবং বাকী সময় ফসলী জমি নষ্ট হওয়ায় আতঙ্কে থাকে। প্রতিবাদ করলে হামলা-মামলার শিকার হতে হয়। নদীতীরের চান্দপুর, কাপ্তানবাজার,ছত্রখিল,বানাসুয়া প্রভৃতি এলাকার একাধিক মানুষ পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, বিগতস্বৈরাচার সরকারের সময় মাটিখেকোদেও তান্ডব সীমাহীন পর্যায়ে ছিল। ২০২৪ এর ৫ আগষ্ট পরবর্র্তী সময়ে সারাদেশের মানুষের মতো নদী তীরের মানুষদেরও স্বস্তি ফিরে আসে। তবে, ওই একই মাসে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা অতিরিক্ত পানির ঢলে ২২ আগষ্ট নদীটির বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া গ্রামে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে পড়াসহ নদীর দু’পাড়ের আদর্শ সদও,বুড়িচং,ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলার কমপক্ষে ২৫/৩০টি স্থান ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে যায়। প্রশাসনের সাথে জান-মাল ও সম্পদ রক্ষায় নদী তীরের হাজার হাজার মানুষ তখন স্বেচ্ছাশ্রমে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মাটি ও বালুর বস্তা দিয়ে অস্থায়ী মেরামত করে। এরপর শুস্ক মৌসুমের প্রথমে তীরের মানুষ অনেকটা প্রতিবাদী থাকলেও গত প্রায় এক মাসের কিছুটা বেশী সময়ে বেপরোয়া হয়ে উঠে মাটি কাটা সিন্ডিকেটের লোকজন। এসময় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বেশ কিছু শ্রমিক,ডাম্পট্রাক, ট্রাক্টর,এস্কেভেটর আটকসহ আর্থিক জরিমানা করলেও কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বর্তমানে মাটি কাটা সিন্ডিকেট সদস্যরা চান্দপুর, কাপ্তানবাজার, ভাটপাড়া, বানাসুয়া, পালপাড়া,দুর্গাপুর, আলেখারচর, আমতলী, বুড়িচংয়ের ভান্তি,পূর্বহুরা, কামারখাড়া,বাবুবাজার এলাকায় একাধিকস্থান থেকে রাতের আধাঁওে মাটি কাটছে। আর এসব মাটি ডাম্পট্রাকযোগে সড়ক,মহাসড়ক হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাটি কাটা সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্য জানান, প্রশাসন ও পুলিশ ম্যানেজ করেই ব্যবসা করি। চুরি করি না। এঅবস্থায় ময়নামতি হাইওয়ে ক্রসিং থানার সামনে দিয়ে রাতভর ডাম্প ট্রাকে মাটি পরিবহনের বিষয়টিও সাধারন মানুষের আলোচনায়। অভিযোগ রয়েছে, চরের আলেখারচর, দুর্গাপুর,আমতলী এলাকা থেকে মাটি কেটে প্রতি রাতে শত শত ডাম্পট্রাকগুলো ময়নামতি হাইওয়ে ক্রসিং থানা এলাকায় উল্টোপথে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করে। এছাড়াও পালপাড়া,বানাসুয়া, ভাটপাড়া এলাকার মাটিবাহী গাড়িগুলো শাসনগাছা বুড়িচং-ব্রাহ্মনপাড়া-মীরপুর সড়ক ব্যবহার করছে। এছাড়াও কাপ্তানবাজার, চান্দপুর এলাকার মাটিবহনকারী ডাম্পট্রাকগুলো ছত্রখীল পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা দিয়ে নদীর উত্তর পাড়ের বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করলেও ফাঁড়ি পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে। এঅবস্থায় গত বছরের সংস্কারবিহীন ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধগুলো মেরামত না করায় নদী তীরের মানুষ সামনের বর্ষায় আবারো নদীর বাঁধ ভাঙ্গার আশঙ্কা করছেন।
এবিষয়ে ময়নামতিহাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল বাহার জানান, পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহলও জোরদার করা হয়েছে মাটি কাটা বন্ধে। এছাড়ায় চেক পোষ্ট বসানোর চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে। তবে প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর থেকে ময়নামতিহাইওয়ে থানার আশপাশের আমতলী, আলেখারচর,দুর্গাপুর,কাইচ্চাতলী এলাকা দিয়ে আলমগীর, হোসেন মেম্বার, লিটন, মিজান, জুয়েল, ইয়াকুব,বায়েজিদ,বুড়িচংয়ের কামারখাড়া এলাকায় জসিমের নেতৃত্বে অবাধে মাটি কাটা হচ্ছে। যা পরবর্তীতে মহাসড়ক পথে ডাম্প্ট্রাকযোগে বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে।