নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লা তথা দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারী নিমসার সব্জিবাজার আগামী এক বছরের জন্য দরপত্র সম্পন্ন হয়েছে। এতে ৫ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৯’শত ১৫ টাকায় সর্বোচ্চ দরপত্রদাতাকে আগামী এক বছরের বাজারের খাজনা আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে বাজারের স্থানীয় ক্ষুদ্র ও পাইকার ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত টাকায় ইজারা নেওয়ার বিষয়টিকে ভালোচোখে দেখছে না। তারা বলছে এঅবস্থায় দরপত্রদাতার অতিরিক্ত খাজনা আদায় কৃষক,ব্যবসায়ী যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হবে,তেমনি সাধারন মানুষকেও ক্রয় করতে হবে অতিরিক্ত মুল্যে। গত ১২ মার্চ বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার এসংক্রান্ত একটি আদেশ দরপত্র বিজয়ীর হাতে তুলে দিয়ে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ইজারার সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে বলেন।
জাতীয় প্রধান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোল ঘেষে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের নিমসার এলাকায় দেশের অন্যতম বৃহৎ এই সব্জি বাজারটির অবস্থান। বাজারটির কিছু অংশ সরকারী জায়গায় থাকলেও পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিশাল এলাকাসহ প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কের ফোরলেনের দু’পাশজুড়ে এর অবস্থান। বাজারে রয়েছে কমপক্ষে তিন’শতাধিক পাইকার আড়তের সাথে আরো কমপক্ষে ৫’শতাধিক ক্ষুদ্র স্থানীয় প্রান্তিক চাষীর বেচা-কেনা। রাত যত গভীর হয় এই বাজারের ব্যস্ততা তত বাড়তে থাকে। দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারের ব্যস্ততাও কমে যায়। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত যেমন রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, যশোহর, নাটোর, গাইবান্ধা, নিলফামারী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ,বরিশাল,ভোলা, চট্টগ্রাম,খাগড়াছড়ি,নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে মৌসুমী শাকসব্জি, দেশীয় ফল ট্রাক,কার্ভার্ডভ্যান যোগে কখনো পাইকার কখনোবা কৃষক সরাসরি বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। একইভাবে কুমিল্লার দাউদকান্দি, চান্দিনা, মুরাদনগর, দেবিদ্বার,বুড়িচং, ব্রাহ্মনপাড়া, আদর্শ সদর, লালমাই,বরুড়া,সদর দক্ষিণ উপজেলা থেকেও কৃষকরা তাদের উৎপাদিত শাকসব্জি,মৌসুমীফলসহ অন্যান্য তরিতরকারি নিয়ে আসে বিক্রির জন্য। সরেজমিন বাজার ঘুরে একাধিক পাইকার ও ক্ষুদ্র প্রান্তিক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, বাজারের ইজারাদার প্রতিটি বিক্রেতার কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত খাজনার অতিরিক্ত আদায় করছে। পূর্বেও এই প্রক্রিয়া থাকায় বিগত ৫ আগষ্ট সরকারী পতনের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বাজারে অভিযান চালিয়ে খাজনা আদায় বন্ধ করে দিয়েছিল। এসময় পন্যের মুল্য বা বাজারে চাহিদা দেখে পাইকারী বা চাষীদের অর্থাৎ বিক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করতে দেখা যায় ইজারাদারের লোকজনদের। একইভাবে স্থানীয় ক্ষুদ্র প্রান্তিক চার্ষীদের থেকেও অস্বাভাবিক খাজনা আদায় করে। এতে বিভিন্ন জেলা ও স্থানীয় এলাকাগুলো থেকে আসা কৃষক বা পাইকাররা অতিরিক্ত খাজনা দিয়ে কাঙ্খিত মুল্য পাচ্ছে না। অনেকটা বাধ্য হয়েই মালামাল বিক্রি করছে প্রতিনিয়ত। মহাসড়কের কুমিল্লাগামী অংশে সড়কের পাশে স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত লাউ, মিষ্টিকুমড়া, পুঁইশাক, পালংশাক, মুলা, লালশাক, পেপে, ফুল ও বাধাঁ,আলু নিয়ে অপেক্ষমান কমপক্ষে ১৫/২০ জন কৃষক সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলতে চাইলেও নাম প্রকাশে রাজি ছিলেন না। তারা বলেন, সরকারী জায়গা ( সড়ক ও জনপথের) খোলা আকাশের নীচে দাড়িয়ে বিক্রি করছি। এখানেও ইজারাদারের লোকজন কখনো সংখ্যা ,কখনো পণ্যের মোঠা গুণে টাকা নিচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, ছোট আকারের এক’শ মোটা বিভিন্ন শাক নিয়ে আসলে তা থেকে মোঠা প্রতি ৩/৪ টাকা ধরে ৩/ ৪ ’শ টাকা নিয়ে নিচ্ছে। এতে করে কাঙ্খিত লাভ হচ্ছে না। একই ভাবে সাম্প্রতিক সময়ে ২৩/২৪ কেজি ওজনের টমেটোর ঝুড়ি থেকেও গড়ে ৫০ টাকার বেশী খাজনা নিচ্ছে। এছাড়াও যেসব পণ্যেও চাহিদা বেশী এবং সরবরাহ অপেক্ষাকৃত কম সেসব ব্যবসায়ী বা আড়ৎদারদেও কাছ থেকেও যেমন খাজনা নিচ্ছে,তেমনি আড়ৎ থেকে কিনতে আসা ব্যাসয়ীদেও কাছ থেকেও নিচ্ছে টাকা। মোট কথা স্থানীয়সহ সারাদেশ থেকে নিয়ে আসা পন্যেও মালিকদেও যেমন খাজনা দিতে হচ্ছে,তেমনি এই বাজার থেকে ক্রয় করে জেলা ও জেলার পাশ^বর্তী বিভিন্ন হাটবাজারে ইজিবাইক,সিএনজি অটোরিক্সা, মিনি ট্রাক,ট্রাক,রিক্সা ভ্যান,কাভার্ডভ্যান এ কিনে নেওয়ার সময়ও খাজনা দিতে হয়। অর্থাৎ এই বাজারে একটি পণ্যে থেকে কমপক্ষে দু’দফা খাজনা নিতে দেখা যায়। এতে করে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এভাবে খাজনা আদায়কারীরা প্রতিটা ব্যবসায়ী থেকে অবস্থা ভেদে ৩’শ থেকে ৪/৫ হাজার টাকা নিচ্ছে প্রতিদিন। যার প্রভাব পড়ে পরবর্তিতে স্থানীয় খুচরো বাজারে। অভিযোগ রয়েছে, এভাবে অস্বাভাবিক মুল্যে ইজারা নিয়ে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী একটি চক্র বাজারটির পণ্যের মুল্য অস্থিতিশীল করে রেখেছিল। এবারেও একইভাবে আগের সুবিধাভোগী চক্রের লোকজন অতিরিক্ত মুল্যে ইজারা নিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে জানান, খাজনা আদায়ে কোন নিয়ম মানা হচ্ছে না। প্রতিটি আড়ৎ বা ছোট ব্যবসায়ীদের ঘর বা বিট প্রতি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থেকে একটা অর্থ ধার্য করে দিলে কৃষক ও পাইকার বা মধ্যস্বত্ত্ব ভূগীরা নিরাপদে ব্যবসা করতে পারতো। এবিষয়ে জানতে চাইলে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার জানান, বড়,মাঝারি, ছোট বা প্রান্তিক ব্যবসায়ী বলতে কোন কিছ ুনেই। পণ্যের উপর টোল নির্ধারন করা হয়। এবছর এখন পর্যন্ত নতুন কোন সরকারী নির্দেশনা আসেনি।