স্টাফ রিপোর্টার :
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের সহযোগীতা চেয়ে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ও নিজেদের জানমাল রক্ষায় কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতিতে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী মাইকযোগে ঘোষনা দিয়ে মাটি কাটা সিন্ডিকেট সদস্যদের ধাওয়ার মুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। শনিবার রাতে সাড়ে ৯টায় ময়নামতির বাগিলারা গ্রামে এঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে স্থানীয় দেবপুর ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এসময় মাটিবাহী ৩টি গাড়ি ও একটি এস্কেভেটরে ভাঙ্গচুর করে। তবে উপজেলা প্রশাসনের লোকজনদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। গত কিছুদিন ধরে গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ভিতর একদল মাটিকাটা সিন্ডিকেট সদস্য প্রতিরক্ষা বাঁধের ক্ষতি করে রাতভর মাটি কেটে ডাম্পট্রাক,ট্রাক্টরযোগে বিক্রয় শুরু করে। এঅবস্থায় উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনে বিভিন্ন ভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। তবে ঘটনার পর বুড়িচং থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখে।
কুমিল্লার প্রধান নদী গোমতী। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও ডুমুর নামক স্থানে উৎপন্ন নদীটি কুমিল্লার কটকবাজার সীমান্ত পথে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় প্রবেশ করে জেলা সদর ও সিটি করপোরেশনের কিছু এলাকাসহ বুড়িচং,ব্রাহ্মনপাড়া,দেবিদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস হয়ে দাউদকান্দির সাপটায় মেঘনা নদীতে মিলিত হয়। নদীটির শহর রক্ষা বাঁধসহ দক্ষিণে রয়েছে ৩১.২৫ কিলোমিটার এবং উত্তর অংশে রয়েছে ৩২.০৫ কিলোমিটার। সাম্প্রতিক সময়ে অর্থাৎ ২০২৪ সালের আগষ্টে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও উজানের পানিতে নদীটির দু’কুল ছাপিয়ে যায়। এসময় আদর্শ সদর,বুড়িচং ও ব্রাহ্মনপাড়ার কমপক্ষে ২৫/৩০ টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। নদী তীর ভাঙ্গার আশঙ্কায় হাজার হাজার মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে প্রতিরক্ষা বাঁধের উপরসহ বিভিন্নস্থানে আতœীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেই সাথে সম্পদ ও জানমাল রক্ষায় দিন-রাত নদী তীরের হাজার হাজার মানুষ বাঁধ রক্ষায় মাটি কেটে ,বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করে। একসময় ২০২৪ এর ২২ আগষ্ট মধ্য রাতে বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকায় তীব্র পানির ¯্রােতে প্রতিরক্ষা বাঁধের বিরাট একটা অংশ ধ্বসে যায়। পরবর্তীতে বুড়িচং ,ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলার বিস্তির্ণ এলাকা তলিয়ে যায় পানিতে। লাখ লাখ লোক পানি বন্দী হয়ে পড়ে। রাস্তা-ঘাট,বসত বাড়ি,ফসলী জমি,গবাদি পশু’র বিপুল পরিমান ক্ষয় ক্ষতি হয়। এসময় নদী তীরের মানুষসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ,সেনাবাহিনীসহ হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী খাদ্য,পানীয়,ঔষধ,কাপড়সহ নানাভাবে সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়ায়। এক সময় পানি নেমে গেলে স্বস্থি ফিরে আসলেও ধ্বসে যাওয়া বাঁধ মেরামত ছাড়া ঝুঁকিতে থাকা অনেক স্থানের মতো বুড়িচংয়ের ময়নামতি ইউনিয়নের মীরপুর,কাঠালিয়া, জালালপুর,বাজেবাহেরচর,বাগিলারা প্রমুখ স্থানের ঝুঁকি থাকা অংশগুলো সংস্কার বা মেরামতে কোন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এরই মাঝে চলতি মার্চ মাসের শুরুতে ময়নামতির বাগিলারা,জালালপুর,বাজেবাহেরচর অংশে বিগত সময়ে মাটি কাটা সিন্ডিকেটের লোকজন আবারো চর থেকে মাটি কাটার উদ্যোগ নেয়। যা নদী তীরের মানুষদের বিগত বাঁধ ভাঙ্গার দুঃসহ স্মুতি মনে করিয়ে দেয়। এঅবস্থায় স্থানীয়রা নিজেদের জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে সংবাদ কর্মীদেও মাধ্যমে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে মাটি কাটার বিষয়টি অবহিত করে। কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে কেউ এগিয়ে আসেনি। পরবর্তীতে সংবাদ কর্মীরা বিষয়টি স্থানীয় দেবপুর ফাঁড়ির আইসি অমর চন্দ্র কে মোবাইল ফোনে এবং বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) কে মোবাইল ফোন ও মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হলেও ৫ ও ৬ আগষ্ট রাতভর মাটি কাটা অব্যাহত থাকে। দেবপুর ফাঁড়ির আইসি নিজেকে মাটিখেকোদেও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে অক্ষমতার কথা জানিয়ে বলেন, আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি,কোন সাড়া পাইনি। এছাড়াও শনিবার রাতে তিনি সাংবাদিকদে আরো জানান, আমি ঢাকা। আমার চাকুরী আর মাত্র ২৮ দিন আছে। মাটিকাটা সিন্ডিকেট সদস্যরা আমি ফোর্স পাঠালে তাদের ডাকাত বলে ধাওয়া করেছে। তবে বাস্তবে শনিবার (৮ মার্চ) রাতে গ্রামবাসী মাটিখেকোদের মসজিদের মাইকযোগে ঘোষনা দিয়ে ধাওয়া করার সত্যতা পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য বর্তমানে ময়নামতির বাগিলারা ,জালালপুর অংশে দাপিয়ে মাটি কাটা সিন্ডিকেট সদস্যরা হচ্ছে, বাজেহুরা গ্রামের মৃত আব্দুর রউফ খন্দকারের ছেলে খন্দকার শাহাদাত হোসেন, বাগিলারা গ্রামের সিরাজ মিয়ার পুত্র আমির হোসেন, জালালপুর গ্রামের মৃত হাবিবের দু’পুত্র শুভ ও সাকিব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের দাবী দ্রুত মাটি কাটা সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। রাতে ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য হারুনসহ একাধিক গ্রামবাসী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, মাটি খেকোদের বাধা দিলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে যে কোন মুল্যে মাটি কাটার অঙ্গীকারসহ বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী নিয়ে আসে এবং গ্রামবাসীকে নানারকম ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। এতে মসজিদের মাইকযোগে ডাকাত পড়ার ঘোষনা দিলে দলে দলে গ্রামবাসী লাঠিসোঠা নিয়ে বেড়িয়ে আসলে মাটিখেকোরা পালিয়ে যায়। পরে কয়েকটি গাড়ি ভাঙ্গচুর হয়। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্থ গাড়িগুলো অজ্ঞাত কারণে পুলিশ জব্দ করে নাই। এঅবস্থায় প্রভাবশালীরা মামলার আলামত নষ্টে গাড়িগুলো নিরাপদে সরিয়ে নেয়।
বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক জানান, অসাধু মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা যেন না হয় সেজন্য পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়েছে।