লাকসাম প্রতিনিধি
কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো দখল করে নিয়মিত বসছে হাট-বাজার। এর ফলে বাড়ছে জনদুর্ভোগ, সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। বিশেষ করে হাটের নিজস্ব জায়গা থাকা সত্ত্বেও লাকসাম পৌরসভার বাইপাস থেকে থানা সড়ক, রেলগেট থেকে মনোহরগঞ্জ সিএনজি স্টেশন, লাকসাম থানা থেকে সামনির ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে হাট-বাজারগুলো সড়ক দখল করে পরিচালিত হচ্ছে। সড়কে হাট-বাজার বসার পাশাপাশি ব্যাটারি চালিত অনুমোদিনহীন অটোরিকশার যন্ত্রণায় অতিষ্ট লাকসাম নগরবাসী। লাকসাম পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রতিদিন সেখানকার সড়কের ওপর বসে বাজার। দুইদিন সাপ্তাহিক হাটও বসে সড়কের ওপর।
এ জন্য লাকসাম পৌরসভা ও বাজারসংলগ্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানজট চরম আকার ধারণ করে। সড়ক দখল করে হাট-বাজার বসানোর ফলে প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে লাকসাম পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে জানা যায় ও দেখা যায়, ডাকাতিয়া নদী বিধৌত পীর মাশায়েখ গাজী সাহেব ও সাধক পুরুষ ঘোষাইয়ের পূন্যভূমি ইতিহাস খ্যাত নারী শিক্ষার অগ্রদূত নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী স্মৃতি বিজড়িত লাকসাম উপজেলা। দীর্ঘদিন থেকে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক শহর হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। দেশের বৃহত্তর রেলওয়ে জংশন এখানে অবস্থিত। একসময় জনমনে প্রবাদ ছিল ‘কত লাকসাম কত বাতি’ কালের বিবর্তনে ১৯৮৪ইং সালে লাকসাম পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে ৯টি ওয়ার্ডে ১৯.৪২ কিঃমিঃ এলাকায় নিয়ে ইহা বৃহত্তম কুমিল্লা জেলার একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। এখানে প্রায় লক্ষাধিক নাগরিকের বসবাস। এখানে অনেক ফ্লাওয়ার মিল, তৈলের মিল, সিগারেট ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান।
কিন্তু বর্তমানে লাকসাম পৌরসভার প্রায় সবগুলো জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের মধ্যে চলছে হাটের বেচাকেনার কাজ। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। এ কারণে সড়কে সব ধরনের যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থাকছে।
যানজটে আটকা পড়ে দুর্ভোগের শিকার যাত্রী আবদুল হালিম বলেন, ‘আমাদের দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই। যারা হাটের ইজারা নিয়েছে তারাই সড়ক দখল করে বাজার বসাইছে। সেখান থেকে নিয়মিত টোল আদায়ও করছে। জনগণের দুর্ভোগে তাদের কিছু আসে-যায় না।’
লাকসাম পৌরসভার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং নাগরিকদের পরিপূর্ণ সেবা প্রদান করতে কর্তৃপক্ষ চোখে পড়ার মতো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। তিনি বলেন একদিকে সড়কের ওপর বাজার, অন্যদিকে ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ লাকসাম পৌরবাসী। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।
এ বিষয়ে লাকসামে কর্মরত মিডিয়াকর্মী সাংবাদিক আব্দুর রহিমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, লাকসাম পৌরসভার সড়কে হাট-বাজার ও যানজটের জন্য দায়ী হিসাবে দেখছেন লাকসাম পৌর কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতাকে। পাশাপাশি ছিন্নমূল হকারদের পরিপূর্ণভাবে পুনর্বাসন করতে পারলেই সড়কে যানজট ও হাটবাজার মুক্ত করা সম্ভব।
এ বিষয়ে সেইভ দ্যা হিউমিনিটির চেয়ারম্যান, কুমিল্লা জজকোট আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর পাবলিক প্রসিকিউটর এবং লাকসাম পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থী এডভোকেট মোহাম্মদ বদিউল আলম সুজন জানান, লাকসাম পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হওয়া সত্বেও নাগরিকগণ তেমন কোন সেবা পাচ্ছেন না। লাকসাম পৌরসভার যা কিছু রয়েছে, সেগুলোকে সুন্দরভাবে পরিচালিত করতে পারলে লাকসাম হবে একটি মডেল পৌরসভা। ইনশাল্লাহ আগামী দিনে লাকসাম পৌরবাসীর সেবা করার সুযোগ হলে সকল প্রকার অনিয়মকে দূর করে পরিচ্ছন্ন ও সুশৃংখল পৌরসভা হিসেবে রুপায়িত করতে বদ্ধ পরিকর থাকবো।
লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও লাকসাম পৌরসভার প্রশাসক কাউছার হামিদ বলেন- লাকসাম পৌরসভার সড়কগুলোতে অবৈধভাবে বসা হাট-বাজারগুলো উচ্ছেদের জন্য বনিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ ও ইজারাদারদের সাথে নিয়ে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। আমরা চলে আসার পর যদি কোন ব্যবসায়ী পুনরায় সড়কে বসে, সেটাতো আর আমরা সমাধান করতে পারবোনা।
তিনি বলেন- ‘সংশ্লিষ্ট হাটের ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। সর্বোপরি কথা হলো- লাকসাম পৌরসভা আমাদের সকলের শহর, সকল নাগরিক মিলে আমরা এর শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।