নিজস্ব প্রতিনিধি
বিএনপি’র ঘাঁটি পরিচিত কুমিল্লা ৯ নির্বাচনী এলাকার লাকসাম মনোহরগঞ্জে এখন চরম সাংগঠনিক অস্থিরতা।
২০ ফেব্রুয়ারি লাকসাম স্টেডিয়ামে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মহাসমাবেশের নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে দু গ্রুপের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব ও ক্ষোভ এখন চরমে। যা যে কোন সময় বিস্ফোরিত হয়ে সংঘাত,হানাহানী ও রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক ইতিহাসের জন্ম দিতে পারে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ নিয়ে আগাম সতর্কতার মেসেজ দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে লাকসাম স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জনসভাটিও সংগঠনিক দ্বন্দ্বের কারণে নিরাপত্তা ও ভারতীয় লোকজনের আনাগোনার অজুহাতে আগের দিন স্থগিত হয়। তৎকালীন এমপি কর্নেল আনোয়ার উল আজিমকে কোণঠাসা করতেই চৈতি গ্রুপের কালাম ও মজির আহমেদ গ্রুপের ত্যপরতায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এই সভা বাতিল হওয়ার খবরে শিরোনাম হয় লাকসাম। দীর্ঘ ২২ বছর পর সেই লাকসাম স্টেডিয়ামে মির্জা আলমগীরের ঐতিহাসিক মহাসমাবেশ। যার মূল নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম। এখানে নিজেদেরকে উপেক্ষিত মনে করছেন কর্নেল আজিম সমর্থক নেতা কর্মীরা।
উল্লেখ্য,সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল আনোয়ারুল আজিম বিগত চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক লাভ করেন। লাকসাম মনোহরগঞ্জে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের কাছে তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। পাশাপাশি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালামও পিছিয়ে নেই। তিনি ইতিমধ্যেই দুই উপজেলায় তৃণমূলে কমিটি গুলো নিজের নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। যার সুবাদে আবুল কালাম সম্প্রতি লাকসাম উপজেলা বিএনপি আহবায়কও হয়েছেন। মনেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে ঠাঁই হযনি আজিম পন্থী নেতাদের। গুম পরিবারের সদস্যরাও হন উপেক্ষিত। অথচ যাদেরকে আবুল কালাম বিএনপি’র ভিন্ন ইউনিটের দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের নিয়ে রয়েছে অনেক নেতিবাচক অভিযোগ। পরিক্ষিত ও দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাদের উপেক্ষা করা হয়েছে এসব কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায়। ৫ আগস্টের পর কিছুসংখ্যক পদবীধারী ও হাইব্রিড নেতাদের দখল, ভাঙচুর,চাঁদাবাজি, নৈরাজ্যে বিএনপি’র ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কোথাও কোথাও বিএনপির সাথে বিএনপি। কোথাও জামায়াতের সাথে বিএনপির দ্বন্দ্ব ও সংঘাত চরম আকার ধারণ করে।
সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলামের খলিফাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও জায়গা সম্পদ তত্ববধানের নিয়ন্ত্রন নিয়ে চলে বিএনপির কতিপয় নেতার মর্ধ্যে কামড়াকামড়ি। বিএনপির এই কামড়াকামড়ি সাথে জামায়াতের দুজন নেতাও এই প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত হন। তিশা বাস কাউন্টার, হ্যালো ট্রাভেল, মাছ বাজার, সিএনজি স্ট্যান্ড,ভুমি অফিস,রেজিস্টি অফিসসহ টাকাও চাঁদাবাজির বিভিন্ন স্পট দখল ও নিয়ন্ত্রণে এখম চলছে বিএনপি- জামায়াতের স্নায়ু যুদ্ধ। ঠিকাদারদের কাজগুলোও একইভাবে হচ্ছে ভাগ বাটোয়ারা। বক্তৃতা বিবৃতিতে আওয়ামীলীগকে মাঠে ময়দা তুলোধুনো করা হলেও পর্দার অন্তরালে চলছে অন্যখেলা। যা সাধারণ মানুষের বুঝার আর কিছু বাকি নেই।
এদিকে লাকসামে মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে কালাম গ্রুপের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। চৈতী গ্রুপে কর্মরত স্টাফদের দিয়ে লাকসাম- মনেরগঞ্জে বিএনপির নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ কালামের বিরুদ্ধে। তার পিএস ইরুয়াইনের মোশাররফ সহ প্রায় একডজন কর্মচারী এখন লাকসাম- মনোহরগঞ্জে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ ও দায়িত্বে নিয়োজিত। উল্লেখ্য, লাকসামে মহব্বত, খায়ের, শামীম, ফারুকদের শাসন ও রাজত্বের অবসান হলেও এখন নতুন করে নাজিল হয়েছে মোশাররফ, ফারুক, ফয়সাল, ইউসুফ ও সৌদি প্রবাসী আনোয়ার উল্লাহ। তাদের মধ্যে আত্নীয়তার বন্ধনও চমৎকার। আর মনোহরগঞ্জে চলছে মাসুদুল আলম বাচ্চুর একদলীয় রাজত্ব ও শাসন। যা জনমনে বিএনপি সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জনসভায় সভাপতিত্ব কে করবেন এনিয়ে এখন চলছে চরম উত্তেজনা।
শোনা যাচ্ছে, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে লাকসাম উপজেলা বিএনপি আহবায়ক কমিটির কার্যকান্ড নাকি স্থগিত করা হয়েছে? যার কারণে উপজেলা কমিটির আহবায়ক হিসেবে এই জনসভায় কালামের সভাপতিত্বের বৈধতা নেই। কিন্তু কালাম গ্রুপ তা স্বীকার করতে নারাজ। তাদের দাবি কমিটি স্হগিতের খবর বানোয়াট। তাই তাদের প্রকাশিত জনসভার পোস্টারে আবুল কালাম সভাপতিত্ব করবেন বলে উল্লেখ রয়েছে। অপরদিকে আজিম গ্রুপের প্রকাশিত পোস্টারে সভাপতি হিসেবে কর্নেল আনোয়ার উল আজিমের নাম শোভা পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, লাকসাম মনোহরগঞ্জের বিএনপি’র বিগত ১৭বছরে দুই গ্রুপের বিরোধ মিটানোর জন্য দলের হাই কমান্ড সফলতার মুখ দেখেনি। সম্প্রতি গুম পরিবারের সদস্যদের সাথে কালাম গ্রুপের সমঝোতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে কর্নেল আনোয়ারুল আজিমকে সম্পৃক্ত না রাখায় গ্রুপিং নিরসনে মহাসচিব এর উদ্যোগ ইতিবাচক ফলাফল আনেনি। বরং মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ২০শে ফেব্রুয়ারির এই জনসভকে ঘিরে এখন আজিম -কালাম গ্রুপের দ্বন্দ্ব ও বিরোধের স্নায়ুযুদ্ধ আরো চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।