নাঙ্গলকোট প্রতিনিধি
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে গরুর খাদ্য খড়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নাঙ্গলকোটে ছোট বড় প্রায় ৫ শতাধিক গরু খামার রয়েছে। এ সব খামারিরা গরুর খাবার জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বর্তমানে প্রতি কেজি খড়ের দাম ৮০-৯০ টাকা হওয়ায় এতে ছোট খামারিরা ব্যাপক হারে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তার সাথে বাড়ছে কৃষকদের ওপর আর্থিক চাপ। গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় নাঙ্গলকোটে প্রায় ৪২৫ হেক্টর ফসলী জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে কৃষকরা ধানের ভাল ফলন ফলাতে পারেনি। এর প্রভাব পড়ছে গো-খাদ্যের উপর। সারা দেশের ন্যায় নাঙ্গলকোটে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি গোঁ-খাদ্যের সংকট দেখা দেওয়ায় বিপাকে রয়েছে ৫ শতাধিক খামারি । পরিস্থিতি এভাবে সংকট জনক হলে কোরবানির ঈদের আগেই গরুর সংকট দেখা দিতে পারে।
পেরিয়া ইউপির কাজী জোড়পুকুরিয়া গ্রামের গরুর খামারি মাইনউদ্দিন জানান, সম্প্রতি বন্যায় আমন ধানের চাষ ব্যাহত হয়েছে। এতে খড়ের সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে গরু-মহিষের প্রয়োজনীয় খাদ্য জোগাতে তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে খড় সংগ্রহ করছেন। খড় এখন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। যার ফলে ছোট ছোট খামারি ও কৃষক পরিবারও এই খড় কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের জন্য এটি একটি আর্থিক চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি খড়ের দাম প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকার মধ্যে উঠেছে। এটি আগে ছিল মাত্র ৪৫ টাকার কাছাকাছি। এদিকে বন্যার কারণে আমন ধানের জমি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া অধিকাংশ জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে, তাতে কৃষকরা ওই জমিতে ধান কাটার জন্য শ্রমিকদের নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন অধিকাংশ কৃষক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। নাঙ্গলকোটে সাতবাড়িয়া, বক্সগঞ্জ, ঢালুয়া এই তিনটি ইউনিয়নে ধানের বড় চাষ হয়, সেসব এলাকায় কৃষকরা এবারের বন্যার ফলে ভাল ফলন না হওয়া আর্থিক ভাবে মারাত্বক ক্ষতি গ্রস্থ হয়ে পড়েছে। তাই গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দেওয়া চাষীরা বোরো আবাদে মনোযোগ বাড়াচ্ছে । তাই বোরো আবাদে ধানের বাম্পার ফলন পেতে ফসলী জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নাঙ্গলকোটের কৃষকরা । শকুন্তলা গ্রামের কৃষক ও খামারি আবুল বাশার জানান, বর্তমানে গো-খাদ্য সরবরাহে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত একটি প্রাপ্তবয়স্ক গরু-মহিষের দৈনিক খাবারের জন্য ৩ থেকে ৪ কেজি খড় প্রয়োজন। কিন্তু এই প্রয়োজনীয় খড়ের দাম এখন অতিরিক্ত। এর ফলে গরু-মহিষের খাদ্য সরবরাহ করতে পারছেন না। অনেকেই খামারের গরু বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। রায়কোট ইউপির খড় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শরিফুল আলম জানান, তিনি দিনাজপুর জেলা থেকে এক ট্রাক খড় কিনে এনেছেন ২ লাখ ১০ হাজার টাকায়। তবে ট্রাক ভাড়া ও বিভিন্ন খরচসহ প্রতি ট্রাকে খরচ পড়ে ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা । আগে কেজি বিক্রি করতাম ৪৫টাকা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা । যা আগের তুলনায় ৪৫ টাকা বেড়েছে। হেসাখাল ইউনিয়নের খামারি দেলোয়ার জানিয়েছেন, খড়ের পাশাপাশি কাঁচা ঘাসেরও তীব্র সংকট রয়েছে। ভুসি ও খইল উচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। খইল ও ভুসির প্রতি কেজির দাম বর্তমানে ৭৫ টাকা। এর ফলে খামারি ও কৃষকদের অনেকেই গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। এলাকার বিজ্ঞজনদের অভিমত গো-খাদ্যের সংকট থেকে মুক্তি পেতে কৃষক ও খামারিদের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে এই সংকট থেকে তারা দ্রুত বের হয়ে আসতে পারেন। বিশেষ করে খড়ের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা এবং বিকল্প খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা হলে কৃষকরা কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার ইমরুল হাসান রাসেল জনকন্ঠকে বলেন, বন্যায় ফসলী জমির অনেক ক্ষতি হয়েছে এর প্রভাব গো–খাদ্যের উপর পড়ছে। আমাদের যেসকল পিজি সদস্য রয়েছে তাদেরকে নিয়ে গরুর বিকল্প খাবার সম্পর্কে সচেতনতামূলক উঠান বৈঠক করেছি। সরকারী ভাবে যে খাদ্য এসেছে তা আমরা খামারীদের মাঝে বন্টন করছি। তবে বেশি বেকায়দায় রয়েছে প্রান্তিক পর্যায়ের ছোট খামারিরা । গো-খাদ্য নিয়ে তাদের একটু কষ্ট হচ্ছে। তবে আশা করছি এবার বোরো আবাদ ভাল হলে গো-খাদ্যের সংকট অনেকটা কেটে যাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বন্যার ফলে আমাদের আমন আবাদ কম হয়েছে । ফলে খড় ও কম হয়েছে এর ফলে বেশি ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা। এটা আসলে কিছুই করার নেই এটি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আলামিন সরকার বলেন , এই বিষয়টি প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা দেখবাল করে, তিনিই বিষয়টি ভাল বলতে পারবেন। তবে এবারের বন্যায় ধান কম হওয়াতে খড় কম হয়েছে। খড়ের বিকল্প খাবার হিসাবে মাঠ পর্যায়ে উঠান বৈঠক সহ স্থানীয় প্রাণীসম্পদ অফিস কাজ করে যাচ্ছে।