একসময় তুখোড় ছাত্রনেতা, জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ, সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী কি কুমিল্লা দক্ষিণ উপজেলা বিএনপি’র কান্ডারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন? এ নিয়ে এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে জল্পনা কল্পনা। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র উপজেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলন বিহীন শাখাগুলোতে এখন চলছে উৎসবমুখর পরিবেশ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আমিনুর রশিদ ইয়াছিন ও জসিমউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ায় নেতাকর্মীরা দারুন খুশি। কারণ ব্যবসায়ী হিসেবে আমিনুর রশিদ ইয়াছিন সাফল্যের দাবিদার হলেও রাজনৈতিক, সংগঠনিক দূরদর্শিতা ও তৃণমূলে সাংগঠনিক নেতৃেত্বর তার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। বিশেষ করে লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপিতে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খল নিরসনের ক্ষেত্রে জেলা কমিটি মোটেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেনি। যা দলের হাইকমান্ডের নীতি নির্ধারকদের পর্যালোচনায় ধরা পড়ে। ফলে বিনা মেঘে বজ্রপাত। হঠাৎ করেই কুমিল্লা জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত। কিন্তু কেন ? এ প্রশ্নটি যখন রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনার বিষয়। এ আহবায়ক কমিটি হঠাৎ কেন ভাঙা হলো ? তার সদত্তোর দিতে হিমশিম খাচ্ছেন জেলার বিএনপি নেতারা। কর্মীরা কিছু বুঝে উঠতে পারছেনা। তবে সবাই বলছেন, দলের হাইকমান্ড দলের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেই হয়তো কমিটি ভেঙেছেন।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩০ মে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে সাবেক সংসদ সদস্য ও দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত নেতা হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনকে আহবায়ক ও জসিম উদ্দিন জসিমকে সদস্য সচিব করা হয়। তিন মাসের জন্য গঠিত এ কমিটির মেয়াদ দুই বছর সাত মাস হয়ে গেছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির অধীনে থাকা ১৪টি সাংগঠনিক কমিটির একটিরও সম্মেলন হয়নি। অথচ দলের হাইকমান্ড চেয়েছিলো তৃণমূল থেকে সম্মেলন করে করে জেলার সম্মেলনের মাধ্যমে সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত করা হোক। কিন্তু দীর্ঘ পৌনে তিন বছরে ১৪টি সাংগঠনিক কমিটি সম্মেলন না হওয়ার বিষয়টি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি বিলুপ্তির অন্যতম কারণ বলে দায়িত্বশীল সুত্রে জানাগেছে।
সূত্র আরো জানায়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আয়োজিত এক ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছেন- ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম নিলে বেহেশত যাওয়া যাবে।’ তার এই বক্তব্য জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। দলের হাইকমান্ড এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ হয়। দেশের বাইরে থেকে স্থানীয় এক নেতার কাছে জানতে চাওয়া হয়- ‘কামরুল হুদাকে নেতা কারা বানিয়েছে ? ঐ নেতা বলেছেন- এ ব্যাপারে জেলা কমিটির আহবায়ক ইয়াছিন ভালো বলতে পারবে।’
আহবায়ক কমিটি বিলুপ্তির পর নেতা কর্মীরা বিভিন্ন হিসাব নিকাশ মিলাচ্ছে। নতুন আহবায়ক হিসেবে আলোচনায় শীর্ষে রয়েছে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীর নাম। এ প্রসংগে বিএনপির বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, নতুন নেতৃত্বে গঠিত হবে আহবায়ক কমিটি।পুরানো লোকজনই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন পুরাতন নেতৃত্বের সমন্বয়ে গঠিত হবে পুর্ণাংগ কমিটি। কি কারণে কমিটি ভাঙলো ? এ প্রশ্নের উত্তর মোস্তাক মিয়া বলেন, দলের প্রয়োজনে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন। এটিও তেমন একটি সিদ্ধান্ত। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি বিলুপ্তের দিন আরো ৩টি কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। হাইকমান্ড প্রয়োজন মনে করেছে বলেই তা করেছে। এদিকে কমিটি বিলুপ্তের পর দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতাদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বিভিন্ন পরিমণ্ডলে বৈঠক করেছেন। যোগাযোগ শুরু করেছেন নীতিনির্ধারকদের কাছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আইনজীবী ব্যারিষ্টার আবদুল্লা আল মামুন, বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। ব্যারিষ্টার মামুন চান বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া আসন থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে। এজন্য পথের কাঁটা হিসেবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব জসিম উদ্দিনকে তিনি কোনঠাসা করে ফেলেছেন।
অন্যদিকে বিএনপি নেতা স্কাইল্যাবের কর্নধার কাউসার জামান বাপ্পীর নেকট্য লাভে অনেকে ত্যপর। মোস্তাক মিয়ার ছেলের বিয়োত্তর বৌভাত অনুষ্ঠানে এ বিষয়টি সবার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। এদিকে মনিরুল হক চৌধুরী এখন নতুন করে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরচিত হয়েছেন মেয়ে সায়মার জন্য। জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দলনে ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌসের জ্বালাময়ী ও মর্মস্পর্শী বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। শেখ হাসিনার পতনে এই শিক্ষিকার ভুমিকা বহুল আলোচিত। রাজপথে নেমে আসে শিক্ষক, অভিভাবক সহ সাধারণ মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর শিক্ষক ড.চৌধুরী সায়মা ফেরদৌসের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা নোয়াগাঁয়ে। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও এমপি জননেতা মনিরুল হক চৌধুরীর মেয়ে তিনি। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি, এই রাজনীতিবিদ নতুন প্রজন্মের কাছে এখন সায়মা আপার বাবা হিসেবে নতুন ভাবে পরিচিতি পেয়েছেন। ২০১৮ সালের সাংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা ১০ আসন থেকে মনিরুল হক চৌধুরী বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হলেও কারাবন্দী ছিলেন। তার মেয়ে সায়মা কারাবন্ধী পিতার সমর্থনে ভোট চেয়ে নির্বাচনী প্রচারনা জ্বালময়ী বক্তব্য রেখে আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন।