মো. মহিবুল ইসলাম, নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
সরকারি ডিউটি চলাকালীন প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ডাক্তার এম. শহিদ উল্যাহ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে দুইজন শিশু ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও ডা. শফিকুল ইসলাম নামে একজন নিয়মিত রোগী দেখছেন। তবে অন্য একজন ডাক্তার এম. শহিদ উল্যাহ অনুপস্থিত থাকায় প্রতিদিন রোগীর উপচেপড়া ভিড় দেখা দেয়। এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অতিরিক্ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে নিজের মতো করেই স্বাধীনভাবে সরকারি হাসপাতালের দায়িত্ব ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট চেম্বার করে যাচ্ছেন তিনি। তারপরও রহস্যজনক কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা. বেলায়েত হোসেন। নিজের ইচ্ছা মতো বায়োমেট্রিক হাজিরা দিয়ে মাসিক বেতন-ভাতা ভোগ করলেও সরকারি হাসপাতালের দায়িত্ব পালনে গুরুত্ব দিচ্ছেন না তিনি। কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই প্রতিদিন বেলা ১১টার পর হাসপাতালে এসে এক ঘন্টা না থেকে বেলা ১২টার আগেই প্রাইভেট চেম্বারে চলে যান তিনি। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা রোগীরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডা. এম. শাহিদ উল্যাহ নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর থেকেই সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টা হতে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ডিউটি করার কথা, তবে তিনি তা না করে নিয়মিত রোগী দেখছেন প্রাইভেট চেম্বারে। তিনি লাকসাম জেনারেল হাসপাতালে শনি থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে ও নাঙ্গলকোট আল্ট্রা মডার্ণ হাসপাতালে প্রতি বুধবার দুপুর ১টা থেকে রোগী দেখেন। এছাড়াও প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে রোগী না দেখে লাকসাম আপস টাওয়ারের ৫ম তলায় নিজস্ব বাসায় প্রাইভেট রোগী দেখেন। সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১০টার পরও তিনি হাসপাতালে উপস্থিত হয়নি। ১১ টায় এসে সাড়ে ১২ টার আগেই তিনি চলে যান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারি জানান, ডা. শাহিদ উল্যাহ বেলা ১১টার দিকে আসেন, এবং ১০-১৫ জন রোগী দেখে তিনি আবার চলে যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন জানান, যতবার চিকিৎসা নিতে আসি, ততবার দেখি ডা. শাফিকুল ইসলাম রোগী দেখেন। ডা. শহিদ উল্যাহকে তেমন দেখি না। মাঝেমধ্যে তিনি এসে আবার চলে যান। একজন ডা. রোগী দেখাতে রোগীদের অনেক ভীড় হয়। আমেনা বেগম নামে এক নারী জানান, ডা. শহিদ উল্যাহ রোগীদের সাথে বাজে ব্যবহার করে। আবার প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে দেখালে তখন ভালো ব্যবহার করেন। রোগীর জটিল কোন সমস্যা দেখলে তিনি তার প্রাইভেট চেম্বারে নিয়ে দেখাতে বলেন। বুধবার (২৭ নভেম্বর) বেলা ১ টা ১০ মিনিট থেকে ডা. এম শহিদ উল্যাহ নাঙ্গলকোট আলট্রা মডার্ন হাসপাতালে প্রাইভেট রোগী দেখেছেন। বিষয়টি ওই হাসপাতালের রিসেপশন থেকে নিশ্চিত করা হয়।বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) ছুটি ছাড়া হাসপাতালে না আসার ব্যপারে ডা. এম শহিদ উল্যাহ বলেন, অফিস টাইম শেষ হওয়ার পরও ছুটি নেওয়া যায়। এখনো ছুটি নি নাই, তবে নিবো। অফিস টাইমে প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী দেখার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। তবে লাকসাম আপস টাওয়ারে ফজরের পর থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত রোগী দেখতে বলে শিকার করেন তিনি।উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা. বেলায়েত হোসেন বলেন, অফিস টাইমে প্রাইভেট রোগী দেখার বিষয়টি আমার জানা নাই। আমি খবর নিবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো। কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আক্তার বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ব্যার্থ হলে আমাকে জানাবেন। আমি অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।