মো: মহিবুল ইসলাম, নাঙ্গলকোট প্রতিনিধি
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার একটি পৌরসভা ১৬টি ইউনিয়নে ৫ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য একমাত্র ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৪-৫ শতাধিক রোগী ডাক্তার দেখাতে আসেন। সেই সঙ্গে জরুরি বিভাগে প্রতিদিন ৭০-৮০ জন নানা রোগে আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। গত কিছুদিন ধরে হাসপাতালটিতে চিকিৎসক কম থাকায় চিকিৎসা সংকট ও বিপুল পরিমাণ ওষুধ থাকা সত্ত্বেও ঔষধ সংকটে ভোগছে রুগীরা। প্রয়োজনীয় ওষুধ না পেয়ে বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগীদের ফার্মেসি থেকে কিনতে হচ্ছে ঔষধ। হাসপাতাল থেকে ঔষধ না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। এতে কেউ কেউ অতিষ্ঠ হয়ে চিকিৎসা ও ঔষধ ছাড়াই বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে।
কয়েকদিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৮ টা থেকে বহির্বিভাগ চালু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১০টার পরও কোন কোন ডাক্তারকে অনুপস্থিত দেখা যায়। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগ চালু রাখার কথা থাকলেও দুপুর দেড়টার দিকে বহির্বিভাগ বন্ধ করে দিয়ে চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা চলে যান। সব মিলিয়ে ৩ ঘন্টার কম সময় ডিউটি করেন ডাক্তাররা। এছাড়াও বহির্বিভাগের টিকিটে কাউন্টারে দুইজনের পরিবর্তে একজন দিয়ে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এতে রুগীরা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
জানা গেছে, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে ১৯ জন ডাক্তার থাকার কথা রয়েছে। তারমধ্য ৬টি পদশূন্য ও ১৩ জন ডাক্তার নিয়মিত থাকার কথা। এরমধ্যে বুধবার হাসপাতালে গিয়ে ৮জন ডাক্তারকে উপস্থিত পাওয়া যায়। এছাড়াও কয়েকজন ডাক্তার কাগজে-কলমে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকলেও তারা কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে সংযুক্তি হিসেবে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। এতে নাঙ্গলকোট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রুগীরা চিকিৎসাহীনতায় ভুগছে।
দীর্ঘদিন ধরে সার্জারি, চক্ষু, ইএনটি, কার্ডিওলজী, অর্থো-সার্জারি, চর্ম ও যৌন, নার্স ও টেকনিশিয়ানসহ বিভিন্ন পদ খালি রয়েছে। এতে করে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলাবাসী।
উন্নতমানের এক্স-রে মেশিন থাকা সত্ত্বেও ১৮ বছর ধরে বন্ধ ছিল বিভাগটি। মাঝখানে কিছুদিন চালু থাকলেও টেকনিশিয়ানের অভাবে আবার বন্ধ হয়ে যায় বিভাগটি। তাছাড়া হাসপাতালের এম্বুলেন্স থাকা সত্ত্বেও চালক না থাকায় অকেজো হয়ে যাচ্ছে এম্বুলেন্সটি। এতে প্রাইভেট এম্বুলেন্স মালিকদের সিন্ডিকেটে পড়ে সর্বহারা হচ্ছে সাধারণ মানুষরা।
উপজেলার বাঙ্গড্ডা ইউপির গান্দাচি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (৫৬) বলেন, ‘চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। কিন্ত এখানে নাকি চর্ম ডাক্তার নাই’, প্রাইভেট হাসপাতালে দেখানোর মতো টাকাও আমার কাছে নাই’।
উপজেলার আদ্রা দক্ষিণ ইউপির শাকতলি গ্রামের রহিমা বেগম (৪১) বলেন, ডাক্তার ৩ দিনের ঔষধ দিয়েছে, এত দূর থেকে এসে মাত্র ৩ দিনের ঔষধ দিছে, আমি আবার আসা সম্ভব না, তাই ঔষধ ছাড়াই চলে যাচ্ছি।
উপজেলার বাতুপাড়া গ্রামের বিলকিস বলেন, আমার সন্তানকে নাক-কান-গলার ডাক্তার দেখাতে সকাল ৯টায় আসছি, এখন ১১ টা বাজে ডাক্তার এখানো আসে নাই। কখন বাড়িতে গিয়ে রান্না করবো।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা, বেলায়েত হোসেন বলেন, ৩ দিনের বেশী ঔষধ দেওয়া হয় না তবে আমাদের কোন ঔষধ সংকট নেই। কয়েকজন ডাক্তার অনুপস্থিত, আমি বিষয়টি দেখবো। এবং অন্যান্য বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাছিমাকে বারবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।