এম এ কাদের অপু
কুমিল্লা জেলার প্রাণ কেন্দ্র লাকসাম উপজেলা। এই উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ২,৭৫,৬৪৬ জন। এক সময় এই উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াতের রাজত্ব চল্লেও আওয়ামীলীগের আবির্ভাব ঘটলে শুরু তাদের রাজত্ব। আর সেই প্রথম থেকেই অর্থাৎ ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন লাকসামের বিএনপির এই নেতা আবদুর রহমান বাদল।
২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দোয়াত কলম মার্কায় প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই লাকসাম উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে কিছুটা বিতর্ক দেখা দিয়েছিলো যদিও আবদুর রহমান বাদল তার প্রতিবাদ করে বলেছিলেন আওয়ামীলীগের ক্যাডাররা ১৯ দলীয় প্রার্থী আবদুর রহমান বাদলের ভোট ছিনিয়ে নিয়েছিলো।
জলিল মেডিকেলের পরিচালক ও রাজনৈতিক জীবনে বহুবার মামলা, হামলার স্বীকার হওয়া এই নেতাকে নিয়ে কয়েকবার বিতর্ক সৃষ্টি হয় দলটিতে। লাকসামের দুই সিংহ পুরুষ সাইফুল ইসলাম হিরো ও হুমায়ুন পারভেজকে র্যাব পরিচয়ে গুম করার পর থেকেই আওয়ামীলীগের সাথে ভিতরগত সম্পর্ক রাখার অভিযোগ আসে।
লাকসাম বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলায় আওয়ামীলীগের সাথে যোগ সাজেসে ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই বিএনপির পার্টি অফিসে কর্ণেল এম আনোয়ারুল আজিমসহ নেতাকর্মীদের উপর আওয়ামীলীগের ন্যাক্কার জনক হামলায় এই আবদুর রহমান বাদক সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করেন তৎকালীন “লাকসাম কলেজ ছাত্রদল” ও “কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল” এর ফেইজবুক আইডিতে। সেই সাথে আবদুর রহমান বাদল ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেওয়ার অভিযোগ তোলেন।
৫ই আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে ক্ষমতাসীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পর ঝিমিয়ে পড়া দলটি মাথানাড়া দিয়ে উঠেন। এরপরে লাকসাম উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আবদুর রহমান বাদলের বিরুদ্ধে আবারও আন্দোলন হয়। বিক্ষোভ মিছিল ও মারধরের ঘটনাও ঘটে হিরো হুমায়ুনের লাকসামে।
মারধর এক্স বিক্ষোভ মিছিলের সময় নেতারা অভিযোগ করে বলেন, পূর্বেরন্যায় এই আবদুর রহমান বাদল আওয়ামীলীগের পলাতক নেতাকর্মীদের সহযোগিতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করে এই বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। পরে লাকসাম খান্দানি মার্কেট রাইস মেইলের সামনে এক বক্তব্যে বিএনপি যুবদলের নেতাকর্মীরা আরেকজন প্রভাবশালী নেতা মানু মিয়ার নামেও উভিযোগ তুলেন। পরে হ্যান্ড মাইক হাতে নিয়ে নেতাকর্মীদের সকল বিষয়ে সমাধান করার লক্ষে এক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের বুঝাতে সক্ষম হোন আলহাজ্ব মজির আহমেদ।
এইদিকে গত ১৭ নভেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে বিএনপির এই নেতা আবদুর রহমান বাদলকে প্রধান আসামী করে ১৩ জনের বিরুদ্ধে লাকসাম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নের ভাকড্ডা গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে মোঃ ওমর ফারুক। অপর আসামীরা হলেন ২/ গাজিমুড়া মধ্যপাড়ার মৃত হোসেন মিয়ার ছেলে মোঃ রুবেল (৩৫) ৩/ চানগাও গ্রামের ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে মোঃ মোরশেদ আলম রকি (২৮) ৪/ ক্যামড্ডা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে জামাল মেম্বার (৪৫) ৫/ ভাকড্ডা গ্রামের মৃত অহিদুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান (৪৭) ৬/ মৃত নোয়াব আলীর ছেলে কোরবান আলী (৫২) ৭/ অশ্বতলা গ্রামের মোসলেম (২৫) ৮/ একই গ্রামের সোহাগ (২৫) ৯/ দক্ষিণ লাকসাম সাহাপাড়ার সাইফুল ইসলামের ছেলে বিপুল (৪০) ১০/ বাকড্ডা গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে স্বপন (৩২) ১১/ বাকড্ডা গ্রামের মৃত আবদুস সালামের ছেলে বাংকার শামসুল হক (৪৫) ১২/ কামড্ডা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে কামাল হোসেন (৩৫) ১৩/ হোসেন মিয়ার ছেলে আবু ইউসুফ (৩৫)।
মামলা সূত্রে জানাযায়, লাকসাম বাজারের ডেংগার মেইলের সামনে মামলার বাদী মোঃ ওমর ফারুক রাজধানীর নিউ মার্কেটে কাপড় ও লেদারের ব্যবসা করেন। ঘটনার দিন ঢাকা থেকে বাসে করে লাকসাম চাঁদপুর রেলগেইটে নেমে লাকসাম মমতাময়ী হাসপাতালে রোগী দেখে বাহির হওয়ার পর ঘটনাস্থলে গেলে ১ আসামী আবদুর রহমান বাদল তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে প্রথমে পিস্তলের গোড়া দিয়ে আঘাত করে পরে এলোপাথাড়ি মারধর করার পর তার পকেটে থাকা নগদ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
এব্যাপারে লাকসাম থানায় ওমর ফারুক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। লাকসাম থানার মামলা নং ০৭. ধারা ৩৪১/৩২৩/৩২৫/৫০৬(২) পেনাল কোড।