নাঙ্গলকোট প্রতিনিধি
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের ঢালুয়া হোমনাবাদ আদর্শ ডিগ্রী কলেজ ল্যাব সহকারী মিয়াজী জাকির হাসান জনি গত ২০২৩ সালের ২৭জুলাই ইউরোপের দেশ ইতালি গিয়ে ভাবে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু কলেজ শিক্ষক কর্মচারী হাজিরা ও বেতন খাতায় তাকে উপস্থিত দেখিয়ে প্রতিমাসে বেতন উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কলেজ অধ্যক্ষ মীর জাহাঙ্গীর হোসেন। ইতালিতে বসবাসকারী মিয়াজী জাকির হাসান জনি ও কলেজ অধ্যক্ষ আপন মামা-ভাগিনা হওয়ায় এ ব্যাপারে কলেজের কোন শিক্ষক কর্মচারী মুখ খুলতে সাহস পাননা। হাজিরা খাতায় ল্যাব সহকারী মিয়াজী জাকির হাসান জনি উপস্থিত থাকায় ও তার বেতন তোলার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ অনিয়মের বিষয়ে খবর নিয়ে দেখা গেছে বিষয়টির সাথে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন উপজেলার মৌকরা ইউনিয়ন যুবলীগ সাবেক সভাপতি কলেজ অধ্যক্ষ মীর জাহাঙ্গীর হোসেন। এছাড়াও ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্য, প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাত, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গর্ভণিং বডির সদস্যদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে। ভিবিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটকে ও অধ্যক্ষকে তার কক্ষে আটক রেখে তালা লাগিয়ে দেওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, উপজেলার মৌকরা ইউনিয়ন যুবলীগ সাবেক সভাপতি মীর জাহাঙ্গীর হোসেনকে আওয়ামীলীগ সরকার আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে হোমনাবাদ আদর্শ কলেজ অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। বিধি বহির্ভূত নিয়োগের অপরাধে ওই সময় গর্ভণিং বডির সিদ্ধান্তে তাকে বহিষ্কার করা হলেও সরকার দলীয় নেতা হওয়ায় উপর মহলের নির্দেশে ১৭মাস পর তাকে পুনঃবহাল করা হয়। মীর জাহাঙ্গীর বহাল হওয়ার পর থেকে ওই কলেজের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ইটালি চলে যাওয়া ল্যাব সহকারী মিয়াজী জাকির হাসান জনি অধ্যক্ষের আপন ভাগিনা। অনিয়মের মাধ্যমে সে নিজের ভাগিনাকে ল্যাব সহকারী নিয়োগ দেয়ার পর উন্নত জীবনের আশায় জনি ইউরোপের দেশ ইতালি চলে যান। কিন্তু ভাগিনা বিদেশে চলে যাওয়ার পরও অধ্যক্ষ তার শিক্ষক-কর্মচারী হাজিরা বহিতে ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে তাকে উপস্থিত দেখিয়ে এক বছর যাবৎ বেতন ভাতা উঠিয়ে আত্মসাৎ করে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আ’লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার পর ওই কলেজের এডহক কমিটি হয়। ওই কমিটিতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহজাহান সাজুকে সভাপতি করা হয়। এডভোকেট শাহজাহান সাজু কলেজের প্রথম সভার রেজুলেশনে স্বাক্ষর করতে গেলেই বিষয়টি নিয়ে বিপত্তি বাঁধে। এর পর থেকেই বিষয়টি জন সম্মূখে আসে। এছাড়াও অধ্যক্ষ প্রতিমাসে কলেজের ক্যাশ থেকে ১০হাজার টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ করেন এবং শিক্ষকদের বঞ্চিত করে কলেজের চতুর্থ শ্রেণীর আওমীলীগ দলীয় ৩ কর্মচারীকে কলেজ ফান্ড থেকে ৪হাজার টাকা করে প্রতি মাসে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত কলেজ অধ্যক্ষ মীর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গর্ভণিং বডি তাকে ছুটি দিয়েছে, সে ছুটি নিয়ে ইতালি গিয়েছে। সে সময় তার থেকে অব্যাহতিপত্র নেয়া হয়েছে, তাকে কন্ডিশন দেয়া হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সে ফিরে না আসলে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে এবং তাকে চাকুরি থেকে অব্যহতি দেয়া হবে। যেহেতু বহিষ্কার করা অনেক ঝামেলার বিষয় তাই তাকে ছুটি দেয়ার সময় তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্র নেয়া হয়েছে। সে নির্দিষ্ট সময়ে না আসায় এখন তার বেতন ভাতা বন্ধ। মিয়াজী জাকির হাসান জনি কত দিনের ছুটিতে ছিলেন? কবে তার পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি লাইন কেটে দিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। এ ব্যাপারে হোমনাবাদ আদর্শ ডিগ্রী কলেজ সভাপতি (এডহক) এডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, কলেজ অধ্যক্ষ তার আপন ভাগিনা ল্যাব সহকারী মিয়াজী জাকির হাসান জনিকে অব্যাহতি দিয়েছে বলে আমাকে জানালেও কোন পদত্যাগপত্র দেখাতে পারেনি। তাছাড়া কলেজের বিভিন্ন হিসাব ও নথিপত্র বিষয়ে তাকে কলেজ গভর্ণিং বডির সভায় প্রশ্ন করলে তিনি এ গুলো তার বাড়িতে রেখেছে বলে জানান এরপর থেকে কলেজের ডুকুমেন্ট গুলো হাজির করার জন্য বলা হলেও সে হাজির করেনি। এ বিষয়ে ও কলেজের বিভিন্ন খরচ বিষয়ে পরবর্তী সভায় প্রশ্ন করলে সে খুব অভদ্র আচরণ করেন। নাঙ্গলকোট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাছির উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জেনেছি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কলেজ সভাপতির সাথে কথা বলবো এবং খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।