বিশেষ প্রতিনিধি
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন ২০১৬ সালে প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগের জন্য ১২ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নেন। পরে স্কুলের বিভিন্ন পদে নিয়োগ ও শিক্ষার্থীদের প্রণোদনাসহ স্কুলের তহবিল থেকে বিভিন্ন কারচুপি ও ভুয়া ভাউচার দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করেছে স্কুলের শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা। এ দাবিতে স্কুলের মূল ফটকের সামনে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন এবং উপজেলা নির্বাহী বরাবর স্মারকলিপি প্রধান করা হয়।
নিয়োগ বাণিজ্যের দুর্নীতি : বিদ্যালয়ের ২১টি পদের ৪টি খালি ছিল, সেই আলোকে ২০২৩ সালের ২৮ দৈনিক যুগান্তর ( ৪নং পৃষ্ঠায় ১ম কলাম ) ও স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক কুমিল্লার কাগজে (৪নং পৃষ্ঠা শেষ ২ কলাম) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ আগস্ট ইন্টারভিউ নেয়া হয়। ওই দিনই তিনজনকে নির্বাচিত করে রবিউল আলম ভূঁইয়াকে মোটা অংকের টাকা দাবি করায় তাকে বাদ দেয়া হয়। পরে নিরাপত্তাকর্মী পদে পুনরায় ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় দৈনিক আজকালের খবর (৭নং পৃষ্ঠা, ৫নং কলাম) ও স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক শিরোনামের ৭নং পৃষ্ঠার ৩নং কলামে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আয়া পদে স্বপ্না রানী দাসকে উৎকোচের বিনিময়ে নিয়োগ দেন। অথচ তার অষ্টম শ্রেণি পাসের দুটি বিদ্যালয়ের দুটি সার্টিফিকেট রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা ও প্রণোদনার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ : প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা ও সার্টিফিকেট বাবদ ২০০ টাকা করে আদায় করেন। এর কোনো টাকাই তিনি স্কুলে জমা দেননি। ভুয়া ভাউচার তৈরি করে ওই টাকা নিজেই ভোগ করেন। ২০২১ সালে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য ১ লাখ ২ হাজার ৯০০ টাকা আসে। ওই টাকা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ না করে নিজেই আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে আন্দোলন করার পর প্রধান শিক্ষককের বিষয়ে তদন্ত শুরু হলে বিভিন্ন নামে-বেনামে প্রণোদনার টাকা বিতরণ শুরু করেন। ২০২৪ সালের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত হারে ফরম ফিলাপের টাকা আদায় করেন। এ টাকার কোনো রসিদ কাটা হয়নি। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভাতার টাকাও আত্মসাৎ করেন তিনি।
অভিযোগকারীর পক্ষে ফেয়ার আলম জানান, প্রধান শিক্ষক আমাদের কয়েকজনের কাছে ও তদন্ত কর্মকর্তার সামনেই স্বীকার করেছেন তিনি শিক্ষার্থীদের প্রনোদনার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয় প্রধান শিক্ষক ক্ষমা চেয়েছেন। এছাড়া তিনি প্রথম বার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৪জনের মধ্যে ৩জনই চুড়ান্ত ও একজনকে বাতিল করেন। পরে তিনি আরো দুটি পত্রিকায় ১জনের জন্য পুনঃরায় আবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তার থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া তিনি গত ৮ বছরে শিক্ষার্থীদের থেকে বিভিন্ন ফি নিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেছেন। নিয়োগের বিষয় তিনি প্রথম বার রবিউল আলম ভূইয়াকে বাদ দিয়ে ২য়বার আবার সেই লোককে কেন নিয়োগ দিবে ? এখানে তিনি অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ করেছেন। আমরা বিভিন্ন ভাবে খবর পেয়েছি তিনি ওই প্রার্থী থেকে ৫ লাখ টাকার বিনিময় নিয়োগের ব্যবস্থা করেছেন।
অভিযুক্ত বেলাল হোসেন জানান, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। আমি বিধিমোতাবেক সব কাজ করেছি। আমার প্রতিষ্ঠানে অডিট রিপোর্ট আপডেট আছে। এছাড়া দ্বিতীয়বার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে কিছু জানি না। কে বা কারা আমাকে ফাঁসানোর জন্য এমন কাজ করেছে। দ্বিতীয়বার প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি নিয়ে প্রতিবেদক ব্যাখ্যা দিলে তিনি ব্যাখ্যার উত্তর না দিয়ে পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে আদেশপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা নাঙ্গলকোট উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসাইনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত চলছে। আরো কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার বাকি আছে। আমি এখন ট্রেনিংয়ে আছি, তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমাইয়া আক্তার লাকী বলেন, প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি তদন্ত করে রিপোর্ট দিলে আমরা সে আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ নিয়ে কুমিল্লা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলামের দেয়া মাউশির তথ্যমতে, ঢালুয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ইআইএন নং ১০৬০৯১)-এর মোট ২১টি পদ রয়েছে। তারমধ্যে গত বছরে ৪টি পদেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৪ জনকে। তাদের ২০২৩ সালের ২ অক্টোবর যোগদান দেখানো হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে যে একজনের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে, তার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। যদি কেউ এ বিষয়ে অনৈতিক সুবিধার জন্য এমন কাজ করে থাকে, কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।