নাঙ্গলকোট প্রতিনিধি
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের পানকরা হাফেজা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তাহমিনা আক্তার গত ১৫ বছর পুর্বে অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ বরখাস্ত হন। কিন্তু তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে এখনও প্রধান শিক্ষিকারপদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সম্প্রতি এলাকাবাসী তার অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগসহ প্রধান শিক্ষিকার অফিস কক্ষে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তাহমিনা আক্তার শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ছাড়াই অনিয়মের মাধ্যমে পানকরা হাফেজা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৯৬ সালে সরাসরি প্রধান শিক্ষিকার পদে যোগদান করেন। যদিও শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা ছিলো কমপক্ষে ১২ বছরের শিক্ষাগতার অভিজ্ঞতা ও বিএ বিএড ছাড়া কেউ প্রধান শিক্ষক হতে পারবেনা। অভিযোগ রয়েছে ওই সময় তার বিএ বিএড সার্টিফিকেট ছিলোনা। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ ও যোগদানের সময় বিএ বিএড সার্টিফিকেট না থাকায় তৎকালীন বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমানুল্লাহ রেজুলেশনের মাধ্যমে ওই সালের ৫ জুন তাহমিনা আক্তারকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে সাময়িক দরখাস্ত করেন। সেই সঙ্গে সহকারী শিক্ষক আহসানুল্লাহকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়। শিক্ষক আহসানুল্লাহ এ বিদ্যালয় থেকে অন্যান্য বিদ্যালয়ে চলে যাওয়ার সুবাদে ২০১০ সালে আরেক সহকারী শিক্ষক মোনাব্বের হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়।
এরই মাঝে চতুর তাহমিনা আক্তার তার স্বামীর সহযোগিতায় ২০০৯ সালে কুমিল্লার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। তিনি দাবী করেন আদালত তার বরখাস্তের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এর স্বপক্ষে কোন প্রমানাদি সাংবাদিকদের দেখাতে ব্যর্থ হন। তাহমিনা আক্তার আদালতে হাজির না হওয়ায় তার মামলাটি ২০১২ সালে খারিজ করে দেন। মামলা খারিজ হয়ে গেলে স্থাগিতাদেশের বৈধতা থাকেনা।
এরপর তড়িগড়ি করে ক্ষমতার প্রভাবে রাজাপাড়া গ্রামের আ’লীগ নেতা মহি উদ্দিনকে সভাপতি করে আরেকটি বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি গঠন করেন। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অবৈধভাবে বেতনভাতা উত্তোলন করে যাচ্ছেন তিনি। করোকালীন সময় ছাত্র-ছাত্রীদের ফরম ফিলাপের টাকা সরকারিভাবে ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও তিনি কোনো টাকা ফেরৎ দেননি। যা নিজে ওই টাকা আত্মসাৎ করেন।
আরো জানা যায়, বিএড সার্টিফিকেট ও অভিজ্ঞতা ছাড়া প্রধান শিক্ষিকার পদ দখল, খারিজ হওয়া মামলার সাময়িক আদেশের কপি দেখিয়ে বেতন ভাতা উত্তোলণ, স্বামীকে দাতা সদস্য অন্তর্ভুক্তি করা, নিয়োগ বানিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে স্কুলের অনুদান আত্মসাৎ করা, স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণকালে দুটি সেমিপাকা ঘর বিক্রি ও বিদ্যালয়ের গাছ বিক্রি করে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা, উপবৃত্তির রেজিষ্ট্রেশনের নামে ৬ষ্ট শ্রেণির ৪৩ জন শিক্ষার্থী থেকে ১ হাজার টাকা করে আদায় করেন। শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি প্রনোদনা ৩ লাখ টাকা অনুদান আত্মসাৎ করা। বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব পরিবর্তন করাসহ নানা অনিয়ম দূর্ণীতির অভিযোগে ওই শিক্ষিকার অপসারণের দাবী স্থানীয় জনতার।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা তাহমিনা আক্তার বলেন, আমি কোনো অনিয়ম ও দূর্ণীতি করেনি। বিভিন্ন ক্ষাতে প্রনোদণার টাকা খরচ করা হয়েছে। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন মামলার করার পর আদালত স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে স্কুল কমিটি আমার পক্ষে থাকায় আর মামলার খবর নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আগেও কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত চলতেছে। শীগ্রই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।